বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খোলা রাখতে হবে দ্বিপক্ষীয় দ্বারও

—তাসনিম এ সিদ্দিকী

খোলা রাখতে হবে দ্বিপক্ষীয় দ্বারও

রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান কঠিন হলেও অসম্ভব নয় বলে মনে করেন শরণার্থীবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান  ড. তাসনিম এ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন যেভাবে এই ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতেও ঠিক একইভাবে লেগে থাকলে সমাধান হবেই। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. তাসনিম এ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ এর আগে বহুদিন দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানের চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তেমন কোনো সমাধান না পেয়ে অত্যন্ত কার্যকরভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইস্যুটিকে বহুপক্ষীয় ফোরামে নিয়ে  গেছেন। এখন আমাদের এই প্রচেষ্টা চালাতে হবে অত্যন্ত  জোরের সঙ্গে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে বাংলাদেশ। এটাও অত্যন্ত সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। এই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দ্বারও খোলা রাখতে হবে। তিনি বলেন, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে আসা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে বালি প্রসেসর প্লাটফর্মে বাংলাদেশকে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার আগে বাংলাদেশকে সব প্রস্তুতি নিতে হবে ভালোভাবে। ড. তাসনিম এ সিদ্দিকী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতারা বুঝে-না বুঝে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা কঠোর হস্তে বন্ধ করা প্রয়োজন। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার কথা বলেছেন। কিন্তু দেশের মধ্যে একজন মন্ত্রী বলে বসলেন, রোহিঙ্গারা শরণার্থী নয় অনুপ্রবেশকারী। এটা হয়তো ঠিক বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে নানান হিসাব নিকাশ করে। শেষ পর্যন্ত হয়ত দেয় না। তাই বলে অনুপ্রবেশকারী বলার কিন্তু কোনো সুযোগ নেই। যখনই অনুপ্রবেশকারী বলা হবে, তখনই আইন ভঙ্গ করার বিষয়টি এখানে সম্পৃক্ত হবে। সম্পৃক্ত হবে সন্ত্রাসবাদের কথা। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তা বলছে না। প্রধানমন্ত্রীও তার বক্তব্যে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক বলেছেন। কিন্তু মন্ত্রী বলে বসলেন তারা অনুপ্রবেশকারী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে এ ধরনের অবিবেচক বক্তব্য পুরো ক্যাম্পেইনের ক্ষতি করতে পারে। তাই দেশের মধ্যে উল্টাপাল্টা বক্তব্য কঠোর হস্তে বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ এখন যে কথা বলছে, তা আরও জোরালোভাবে বিশ্ব দরবারে বলতে হবে। ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশের জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এর মধ্যে প্রথমত চীন ও ভারতকে পরিস্থিতি অনুধাবনে বাধ্য করাতে হবে। আসলে চীন ও ভারতের জনগণকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের চিত্র জানাতে হবে। বোঝাতে হবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কী ধরনের বীভৎস আচরণ করছে। এটা সম্ভব চীনের সঙ্গে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে। চীনে বাংলাদেশের যে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিরা যাচ্ছেন তারাই পারেন বিভিন্ন মাধ্যমে (নাটক, সিনেমা ইত্যাদি) চীনের নাগরিকদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জানাতে। তাহলেই এখন যেমন ভারতে বেশ কিছু নাগরিক গোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, তেমনটি চীনেও হতে পারে। আসলে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এখনো অনেক দূর যাওয়ার আছে।

সর্বশেষ খবর