বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের দরকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব

—ড. দেলোয়ার হোসেন

রোহিঙ্গাদের দরকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব

প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘে দেওয়া পাঁচ প্রস্তাবের মধ্যেই রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের কথা বলা হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ড. দেলোয়ার বলেন, কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনে যে ব্যবস্থাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলেই রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান সম্ভব। তবে বর্তমান সংকট কাটাতে হলে স্থায়ী সমাধানের আগে বাংলাদেশে থাকা প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর জন্যও এক ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সমাধানের প্রয়োজন আছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থান নিশ্চিত করাকেও সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটা আমরা যুগের পর যুগ দেখে আসছি। কিন্তু এবারের আগে সেভাবে কখনোই কোনো দেশের পক্ষ থেকে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য যেসব ভাবনা প্রয়োজন— তা ভেবে দেখা হয়নি। এটা একটা ভালো দিক। কিন্তু মিয়ানমার এসবের কতটা কি মানবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিস্থিতি উত্তরণে একমাত্র ক্ষেত্র হতে পারে বাস্তবভিত্তিক কূটনীতি। যে বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে আমরা আছি সেটাকেই গুরুত্ব দিয়ে কূটনীতি পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, চোখ বন্ধ করে কল্পনার জগতে কোনো স্থায়ী সমাধানের কথা চিন্তা করলে হবে না। সমাধানের জন্য সবার আগে সমাধানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে আলোচনা চলছে সেটা ক্ষেত্র প্রস্তুতের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের অগ্রগতি। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুর পরও যে রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারকে সমর্থন করছে তাদের অনুধাবন করানো এখনো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অধ্যাপক ড. দেলোয়ার বলেন, রোহিঙ্গাদের সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন আছে। ফিলিস্তিনের নাগরিকদের ইয়াসির আরাফাতের মতো শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকার পরও তারা এখনো অধিকার বঞ্চিত রয়েছে। ফিলিস্তিন যেভাবে বিশ্বব্যাপী সমর্থন পেয়েছে, সেখানে অন্য কোনো অধিকারবঞ্চিত জনগোষ্ঠী সমর্থন পায়নি। কিন্তু সেই ফিলিস্তিন এখনো বঞ্চিত। বিপরীত দিকে রোহিঙ্গাদের তেমন কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বই নেই। বরং আরসার মতো একটি বিতর্কিত সংগঠন তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ রক্ষার বদলে তাদের বিতর্কিত করছে।

তিনি বলেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য রোহিঙ্গাদের এমন এক ধরনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন যারা শুধু রাখাইনে বা মিয়ানমারে গ্রহণযোগ্য হবে না, বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য হবে। তবে মনে রাখতে হবে স্থায়ী সমাধানের আগে মিয়ানমারের যে বিশাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে বসবাস করছে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা বিশেষ চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করে ত্রিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়া আরেকটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।

সর্বশেষ খবর