বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী ২৭

পত্রিকার ছবিতে মিলল খুনি

মির্জা মেহেদী তমাল

পত্রিকার ছবিতে মিলল খুনি

নীলফামারীর ডোমারের সোনারা বাজারের হোটেলে নাস্তা খেতে বসে ওবায়দুল। কিন্তু পত্রিকায় তার ছবি প্রকাশ হওয়ায় তাকে অনেকেই চিনত। একজন মাংস বিক্রেতার চোখে ধরা পড়ে যায় ওবায়দুল। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা (১৫)-এর হত্যাকারী বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল হক (২৮) অবশেষে এভাবেই গ্রেফতার হয়।

ডোমার উপজেলার সোনারা বাজারে হোটেলে নাস্তা করার সময় ডোমার থানা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা হতে ডোমারের বিভিন্ন স্থানে ডিএমপি পুলিশ ডোমার থানা পুলিশ, র‌্যাব তাকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। পুলিশ জানায়, চাঞ্চল্যকর রিশা হত্যাকাণ্ডের সাত দিনের মাথায় খুনি ওবায়দুল হক গ্রেফতার হয়। খুনি ওবায়দুল গ্রেফতারের পর পর ডোমার থানায় ছুটে যান র‌্যাব ১৩ কোম্পানি কমান্ডার মো. আতিক, নীলফামারী পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান।

পুলিশ জানায়, ভগ্নিপতির ছোট ভাই ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার শাখার অফিস সহকারী খুশবুর খোঁজে ডোমারে যায় ওবায়দুল। ওই সময় ডোমার ব্র্যাক কার্যালয়ে খুশবুকে পায়নি সে। পরে সে খুশবুর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে। কথোপকথনের পর ওবায়দুলকে ধরতে কৌশলের আশ্রয় নেন খুশবু। তিনি ব্র্যাকের ডোমার শাখার অফিস সহকারী শাহাদাতকে ফোনে বিষয়টি জানান।

খুশবু শাহাদাতকে বলেন, তিনি যেন ওবায়দুলকে চা পান করান এবং সঙ্গ দেন। এরপর খুশবু বীরগঞ্জ থানায় ফোন করে ওবায়দুলের অবস্থানের বিষয়ে জানান। পরে বীরগঞ্জ থানা পুলিশ বিষয়টি ডোমার থানায় জানায়। খবর পেয়ে ঢাকার রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেনসহ একদল পুলিশ নিয়ে রাত ৮টার দিকে ডোমার ব্র্যাক কার্যালয়ে হানা দেন ডোমার থানার ওসি রাজিউর। ঘটনাস্থলে গিয়ে ওবায়দুলকে পায়নি পুলিশ। ওই সময় পুলিশ শাহাদাত ও খুশবুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওবায়দুলকে ধরতে রাতভর চলে অভিযান। ভোররাতে অভিযান সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে পুলিশ। এ সুযোগে আত্মগোপনে থাকা ওবায়দুল নীলফামারী থেকে ডোমার পালিয়ে যাচ্ছিল।

ডোমারের হরিণচড়া গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে দুলাল হোসেন (৪০) জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে রিশার খুনি ওবায়দুলকে সোনারা বাজারে হোটেলে নাস্তা খেতে দেখি। এর আগে এই খুনির ছবি বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও ফেসবুকে দেখেছিলাম। চেহারা মিলে যাওয়ায় তাত্ক্ষণিকভাবে ডোমার থানায় জানালে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর ঘটনাস্থলে আসে ডিএমপি পুলিশ ও র‌্যাব। ডোমারে অবস্থানকারী এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেন জানায়, গত বছর  ২৪ আগস্ট (বুধবার) উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে রিশাকে ছুরিকাঘাত করে বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল হক। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছর ২৮ আগস্ট রিশা মারা যায়। রিশাকে ছুরিকাঘাত করার পরদিন তার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। রিশার মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

তিনি বলেন, খুনি ওবায়দুল ঠাকুরগাঁও গোয়ালপাড়া মহল্লার আবদুস সামাদ ও চান্দনী বেগমের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষে রিশা হত্যার ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হিসেবে আখ্যায়িত করে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পুলিশের পাওয়া তথ্যানুযায়ী ওবায়দুল প্রায়ই রিশার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত এবং প্রেমের প্রস্তাব দিত, কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ওবায়দুল।

খুনি ওবায়দুল ঢাকা হতে পালিয়ে প্রথমে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে তার বোন ও দুলাভাইয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিল। সেখানেও পুলিশ অভিযান চালায়। খুনিকে পাওয়া না গেলেও ওবায়দুলের বোন মোছা. খাদিজা বেগম (৩৬) ও দুলাভাই খাদেমুলকে (৪৬) আটক করে পুলিশ। গত বছর ২৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেন বীরগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঘাতক ওবায়দুলের নিজ বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে ও ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। সূত্রমতে সেখান  থেকে পালিয়ে খুনি ওবায়দুল নীলফামারীর ডোমারে এসে অবস্থান নেয়। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ঘটনার প্রায় ৭ মাস আগে রিশা পোশাক বানাতে গেলে টেইলার্সে পরিবারের মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হয়। আর সেই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরেই রিশাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল ওবায়দুল। একপর্যায়ে নম্বরটি বন্ধ করে দিলে ওবায়দুল আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর ২৪ আগস্ট রিশাকে ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল পালিয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর