বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

থামছে না অনুপ্রবেশ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, টেকনাফ ও উখিয়া ঘুরে

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যেন থামছেই না। প্রতিদিন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এখনো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। গতকাল টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে। আগের দুই দিনে আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এ নিয়ে গত এক মাসে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এলেও সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিজিপি আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত মংডু, ভুছিদং ও রাছিদংয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালাচ্ছে। সেনারা রোহিঙ্গাদের পাড়া জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবং তাদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।  আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, গতকাল মিয়ানমারের মংডুর শেষ প্রান্তে অবস্থিত নাইক্যনদিয়া দিয়ে নৌকা ও ট্রলারযোগে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। যারা এপারে পালিয়ে এসেছে তিন-চার দিন আগে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। পাহাড়ে-জঙ্গলে অর্ধাহারে-অনাহারে কয়েক দিন রাত কাটিয়ে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচাতে পেরেছে তারা। আবার অনেকে তাদের পরিবারের একাধিক সদস্যকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ ঘাটে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে গতকাল। নিঃস্ব রোহিঙ্গাদের অনেকেই সে টাকা দিয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে আবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের পাশে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা তাদের নির্ধারিত ক্যাম্পের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছে। অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতেই তাদের আশ্রয়স্থল খুঁজে নিতে বলা হয়েছে। দ্রুত ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের। গতকাল পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারে বিভিন্ন পাহাড়ে এখনো লুকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। কেউ কেউ এখনো বাংলাদেশ মিয়ানমারের স্থলসীমান্তের দিকে হাঁটা পথে রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা দল বেঁধে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় হাঁটছে।

অনেক কাফেলা মিয়ানমার সেনাবাহিনী, মগ ও বিজিপির হামলার শিকার হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এদিকে শাহপরীর দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমারের নাইক্যনদিয়ায় আরও প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষ এপারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের অনেকে আসার নৌকা ভাড়া দিতে পারছে না বলে ওপারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রতিমুহূর্তে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপির হামলার আশঙ্কায় রয়েছে বাস্তুহারা এসব রোহিঙ্গা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর