বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বসতি হবে রোহিঙ্গাদের

২০ ব্লকে ১৪ হাজার শেড, চার হাজার নির্মাণ করবে সেনাবাহিনী

মাহমুদ আজহার ও ফারুক তাহের, (কুতুপালং) কক্সবাজার ঘুরে

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর আর্থিক সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে। উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে দুই হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে প্রায় ১৪ হাজার শেড নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত। খুব শিগগিরই শেড নির্মাণ শুরু হবে। ২০টি ব্লকে এসব শেডে কমপক্ষে ৯ লাখ রোহিঙ্গা বসতির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ নিয়ে সম্প্রতি সরকার, সেনাবাহিনী ও দাতা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। এতে চার হাজার শেড নির্মাণ করবে সেনাবাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকারি সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের আপৎকালে পাশে দাঁড়িয়ে তাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। সরকার আশা করে, যে কোনো সময়ে মিয়ানমার সরকার তাদের দেশের এসব নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে। ফেরত নেওয়ার জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিয়ে চলেছে। এখন যেহেতু তারা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাই মানবিক কারণে তাদের বসবাসের বিষয়টি নিয়ে ভাবছে সরকার। এর আগে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ঠেঙ্গারচরে স্থায়ী বসবাস ও পুনর্বাসনের কথাও চিন্তা করেছিল সরকার। রোহিঙ্গারা যেহেতু মিয়ানমারের আদিবাসী ও নাগরিক, তাই তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠাতেই সরকারের পক্ষ থেকে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তৎপরতা চলছে। আপাতত তারা যাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্বস্তিতে বাস করতে পারে সে সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাবিষয়ক কাজে নিয়োজিত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ কে এম মোখলেছুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে, সরকার নির্ধারিত দুই হাজার একর জায়গায়ই এদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গার বসতি হয়ে যাবে। যতটুকু জানি— রোহিঙ্গাদের বসতির জন্য শেডগুলোর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক পরিবার একত্রিত হয়ে থাকতে পারে। আমাদের মূল্যবান বনভূমির যাতে অধিকমাত্রায় ক্ষতিসাধন না হয়, সেদিকটিও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সাময়িক আবাসস্থল নিশ্চিত করতে প্রাথমিক পর্যায়ে দুই হাজার একর পাহাড়ি জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। এ জমিতে ১৪ হাজার শেড নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আইওএমসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এ ছাড়া তুরস্ক রোহিঙ্গাদের জন্য এক লাখ ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। সেই সঙ্গে এক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমকে যতদিন তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না, ততদিন ভরণ-পোষণের দায়িত্বও নেবে তুরস্ক। সূত্রমতে, পরিকল্পিত শেডগুলো নির্মাণ হলে একটিতে অন্তত ১৩টি পরিবার বাস করতে পারবে। একটি পরিবারের ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ধরা হয়েছে পাঁচজন। এ হিসেবে ১৪ হাজার শেডে ৯ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা আবাস সুবিধা পাবে। এ শেডগুলোতেও রোহিঙ্গাদের থাকার স্থান সংকুলান না হলে পর্যায়ক্রমে আরও কিছু জমি বনবিভাগ থেকে নেওয়া হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আরিফুল হক মামুন বলেন, আমরা সব রোহিঙ্গাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আসতে চাই। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, আগেরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। অনেকে বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। এতে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া তারা একসঙ্গে থাকলে সুযোগ-সুবিধাও বেশি পাবে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, তুমব্রু, ঘুমধুমসহ টেকনাফ পর্যন্ত বিভিন্ন পাহাড়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা তাঁবু টানিয়ে অবস্থান নিয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পাহাড় থেকে সরানোর জন্য নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এলাকাগুলোতে মাইকিং করে তাদের সরকার নির্ধারিত জায়গায় যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। পাহাড়ে থাকতে উদ্বুদ্ধকারী স্থানীয় দালাল চক্রকেও হাতেনাতে ধরছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরই মধ্যে শতাধিক দালালকে ধরে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত যতগুলো অস্থায়ী তাঁবু খাটানো হয়েছে, তার ক্রম সংখ্যা বসানো হচ্ছে। এটা ধরেই রোহিঙ্গার সংখ্যা নিরূপণ করা হবে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা নিবন্ধিত হলে তা সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য শিগগিরই ১০০টি নিবন্ধন বুথে এ কার্যক্রম চালানো হবে।

নিবন্ধনে অনাগ্রহ : নিবন্ধনে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে রোহিঙ্গারা। বিশেষ করে পরিচয়পত্রে জাতীয়তা ও দেশের নাম নিয়ে আপত্তি তুলে নিবন্ধন কেন্দ্রে আসছে না রোহিঙ্গারা। তবে নিবন্ধন কার্যক্রমের প্রধান মেজর কাজী উবায়দুর রেজা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জাতীয়তার ঘরে লেখা হচ্ছে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। ১১ সেপ্টেম্বর নিবন্ধন শুরুর সময় পরিচয়পত্রে ‘মিয়ানমার’ ও ‘রোহিঙ্গা’  লেখা হচ্ছিল। পরে লেখা হয় ‘মিয়ানমার’ ও ‘মুসলিম’ শব্দ দুটি। সর্বশেষ  সোমবার  থেকে  লেখা হচ্ছে শুধু ‘মিয়ানমার’। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অনেকে দাবি তুলছে, পরিচয়পত্রে তাদের ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা’ উল্লেখ করতে।  এটা না করায় তারা নিবন্ধন কেন্দ্রে আসছেন না। গতকাল দুপুরে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে গিয়ে নিবন্ধন কাজে থাকা অপারেটরদের নিষ্ক্রিয় বসে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কোনো রোহিঙ্গাকে নিবন্ধন বুথে দেখা যায়নি। নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা জানান, আজ অনেক মন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা এসেছেন, তাই নিবন্ধন কার্যক্রমে একটু ভাটা পড়েছে। 

তবে মেজর উবায়দুর বলেন, গকাল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শখানেক রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হতে এসেছেন, যেখানে মঙ্গলবার হয়েছেন ১৬ শতাধিক। রবিবার পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৬৪ জন, সোমবার ২ হাজার ৯৫১ জন এবং মঙ্গলবার ১৬ শতাধিক রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছেন। বর্তমানে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে ১২টি ও নয়াপাড়ায় ১৮টি বুথের মাধ্যমে এ নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর