বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চীন-পাকিস্তানের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে এ দেশে : বিশ্ব ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। গতকাল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে      বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, চলতি অর্থবছর চীন ৬ দশমিক ৩, ইন্দোনেশিয়া ৫ দশমিক ৩, থাইল্যান্ড ৩ দশমিক ৩, পাকিস্তান ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংস্থাটির বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের আবাসিক প্রতিনিধি কিমিয়াও ফান। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করেন সংস্থাটির মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। জিডিপি নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ শতাংশ বিন্দু কম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য সরকার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির (৬ দশমিক ৪ শতাংশ) এই প্রাক্কলন একমাত্র ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক মূল্যায়নে এটা খুবই ভালো প্রবৃদ্ধি। ভারতে এবার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন দেওয়া হয়েছিল, সেটাও হয়তো থাকবে না। আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ সরকার এ বছর ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধির যে আশার কথা শুনিয়েছে, তা অর্জন করতে হলে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেসরকারি খাতে প্রচুর বিনিয়োগ ও গুণগত মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

সংস্থাটি বলছে, সাম্প্রতিক কালে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমে গেছে। এর পেছনে জমির অপ্রতুলতা, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার না হওয়ার বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে। চলতি বছর বাজেট বাস্তবায়নে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত চাপ রয়েছে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, খাদ্যে ভর্তুকি, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য ত্রাণের সংস্থান করার মতো বিষয়গুলো বাজেটে চাপ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগের বছর হওয়ায় চলতি অর্থবছরে বড় ধরনের সংস্কারের সম্ভাবনাও কম বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। চালের দাম বৃদ্ধিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ বলেন, পর পর দুটি বড় বন্যা ও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, সরকারি যেসব সিদ্ধান্ত তা বাস্তবায়নে সময় নেওয়া হয়েছে। শুল্ক কমানো হলেও সে অর্ডার বন্দরে পৌঁছতে সময় লেগেছে। ফলে সরকারের কাছে চালের মজুদ না থাকায় ব্যবসায়ীরা বাজার সুবিধা নিয়েছে। এ ছাড়া ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে এমন গুজবেও চালের দাম বেড়েছে।

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক : রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কিমিয়াও ফান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বাড়তি ও অন্যতম চাপ। এজন্য আমরা উদ্বিগ্ন। তাদের (রোহিঙ্গা) শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।’ বিশ্বব্যাংকের এই আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, অন্যান্য দাতা সংস্থার মতো বিশ্বব্যাংকও পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডা) তহবিল থেকে ৪০ কোটি ডলারের সহায়তা পেতে পারে। এই অর্থ অনুদান বা ঋণ দুই ভাবে হতে পারে। তবে অনুদান হিসেবে পেতে এই অর্থ দেওয়ার আগে বিশ্বব্যাংক দেখবে সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কী কী কর্মসূচি হাতে নিয়ে নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর