বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
উল্টো পথে গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান

প্রশংসা পাচ্ছে পুলিশের সাহসী ভূমিকা

সাখাওয়াত কাওসার

রাজধানীতে আইন অমান্য করে উল্টোপথে চলা গাড়ি ধরতে পুলিশি অভিযানে রেহাই মিলছে না মন্ত্রী, আমলা, ভিআইপি কিংবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করা ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তি রয়েছেন রীতিমতো আতঙ্কে।

পরপর তিন দিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অভিযানে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বর্তমানে উল্টোপথে গাড়ি ধরার অভিযান চললেও ক্রমান্বয়ে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা ও হেলমেট-স্টিকার ব্যবহার না করার বিরুদ্ধে এবং লাইসেন্স যাচাই-বাছাইয়ের অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। অন্যদিকে রাজধানীর সড়কে যানজট কমানো ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের দুঃসাহসিক অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। যে কোনো ধরনের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে পুলিশকে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন তারা।

ডিএমপি সূত্র বলছে, গতকাল ট্রফিক দক্ষিণ ও পশ্চিম বিভাগে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর অপরাধে মাত্র ১২টি মোটরসাইকেল আরোহীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে এর আগের দিন মঙ্গলবার ৪৪৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। সোমবার উল্টোপথে গাড়ি চলার কারণে ৪৮৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। যানজট থেকে মুক্তি পেতে রাজধানীর সড়কগুলোয় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা নগরবাসীকে এ বার্তাই দিতে চাই। একইসঙ্গে আমরা নগরবাসীর সহায়তা চাই। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পর্যায়ক্রমে আমাদের অভিযান চলবে। আমরা আরও ৮-১০টি এজেন্ডা নিয়ে অভিযান চালাব।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকার জনজীবন অত্যন্ত মন্থর হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম সড়কের উল্টো দিক দিয়ে যানবাহন চালানো। কোনো সভ্য সমাজে এটা কল্পনাতীত, কিন্তু আমাদের দেশে যেন স্বাভাবিক চর্চায় পরিণত হয়েছে। আশ্চর্য হলেও সত্য, উল্টো দিকে সড়কের ব্যবহারে সবচেয়ে এগিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থানকারীরা। তবে গত রবিবার রমনা উদ্যানের উল্টো দিকে ‘মন্ত্রিপাড়া’ হিসেবে পরিচিত এলাকার সড়কে পুলিশ হঠাৎ করে এক অভিনব অভিযানে নামলে অনেকেই নড়েচড়ে বসেন। ওইদিনই প্রায় দুই ঘণ্টায় ৫৭টি গাড়ি আটক করলে দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে ৪০টিই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, ‘আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। যদিও অনেক সময়ই তা দেওয়া হয় না। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে এটা চোখে পড়ে। বিদেশিরা এসব দৃশ্য দেখে আমাদের দেশ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যও করতেন। তবে এখন যেভাবে অভিযান চলছে তা নিয়মিতই হওয়া দরকার, তাহলে ভয়ে হলেও অমান্যকারীরা শৃঙ্খলায় ফিরবেন।’ রবিবারের অভিযানের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ নিজেও উপস্থিত ছিলেন। এই খবরে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও ওখানে হাজির হয়েছিলেন। টানা অভিযানে ধরা খান প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার ধরা পড়েন সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পরে গাড়ির চালককে জরিমানা করে গাড়িটি সঠিক পথে যেতে বাধ্য করা হয়। পরপর দুই দিন রাজধানীতে উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে ধরা পড়ায় সমবায় অধিদফতরের গাড়িচালক বাবুল মোল্লাকে শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল এ নোটিস দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন এ তথ্য দিয়ে বলেন, ‘জবাব পাওয়ার পর তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানাকে বহনকারী গাড়ি উল্টোপথে চালিয়ে রবিবার রাজধানীর হেয়ার রোডে ধরা পড়েছিলেন গাড়ির চালক বাবুল মোল্লা। ওই ঘটনায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে মামলা হয় এবং জরিমানাও গুনতে হয় চালককে। পরদিন বিকালে আবার উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে বাংলামোটর এলাকায় ধরা পড়েন বাবুল মোল্লা।

গতকাল ট্রাফিক (পশ্চিম) বিভাগের উপকমিশনার লিটন কুমার দাস বলেন, ‘পূজার নিরাপত্তার কারণে এদিন অভিযান কিছুটা মন্থর ছিল। তবে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর অপরাধে ৭টি গাড়িকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইলে কথা বলা, লাইসেন্সে অসঙ্গতির কারণে আরও ৩৩টি মামলা করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর