শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নৌকা ডুবে শিশুসহ ১৬ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, কক্সবাজার থেকে

নৌকা ডুবে শিশুসহ ১৬ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার

নৌকাডুবিতে মৃত এক শিশুর লাশ নিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। কক্সবাজারের ইনানী বিচ থেকে গতকাল রাতে তোলা ছবি —রোহেত রাজীব

শতাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে উখিয়ায় বঙ্গোপসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ১৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বিকালে কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী সৈকতের পাতুয়ারটেক এলাকা থেকে এ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে নৌকাটি ইনানী বিচের দিকে আসছিল। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ১০ জনই শিশু। বাকিরা বয়স্ক নারী। পরে লাশগুলো মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ। নির্মম এ ঘটনার পেছনে একটি দালাল চক্রের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা। রাত ৯টায় ভাটার কারণে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। আজ সকালে জোয়ার শুরু হলে এ অভিযান আবারও চলবে বলে জানিয়েছে উখিয়া থানা পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে ২৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনো অর্ধশত নিখোঁজ। এর আগেও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় নাফ নদে নৌকাডুবিতে ১৫ জন নারী ও শিশু মারা যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় জীবিত উদ্ধার রোহিঙ্গা নারী নূর ফাতেমা (২৫) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বুধবার বিকালে মংডুর সর্বশেষ সীমানা লামারদিয়ার নির্জন জায়গা থেকে একটি দালালচক্র তাদের নৌকায় তোলে। দুই ঘণ্টায় বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি শতাধিক রোহিঙ্গাকে নৌকায় নেয় দালালরা। এরপর নৌকাটিকে শাহপরীর দ্বীপের দিকে না এনে দালালরা অতিরিক্ত টাকা-পয়সা ও মহিলাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘গভীর সাগরে এক রাত এক দিন ভাসিয়ে রাখার পর নৌকাটি আজ (গতকাল) বিকালে তীরের দিকে আসতে থাকে। নৌকার মাঝিরা সাগরে থাকতেই আমাদের সব টাকা-পয়সা লুটে নেয়। এরপর বিকালে হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হলে কিনারে আসার একটু আগেই নৌকাটি ডুবে যায়। আমার একটি দেড় বছরের ও একটি ৯ মাসের বাচ্চা কোলে ছিল। তাদের নিয়েই সাগরে কয়েক মিনিট সাঁতার কাটি। কিন্তু একসময় দেখি আমার দুই বাচ্চাই আমার হাতে নেই। কিছুক্ষণ পর আমার বড় ছেলেকে একটা লোক জীবিত অবস্থায় আমার সামনে নিয়ে আসেন। এরপর কী হলো আর জানি না।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী ইনানী বিচের দোকানদার আহমদ হোসেন ও রিদোয়ানুল হক বলেন, ‘মাগরিবের আগে একটি নৌকা ঝড়ের কবলে পড়ে তীরের দিকে আসতে থাকে। আমরা মাছধরার নৌকা মনে করেছি। কিছুক্ষণ পরই নৌকাটি সাগরের ঢেউয়ে কাত হয়ে ডুবে যায়। এরপর দেখি সাগের মানুষ আর মানুষ ভাসছে। আমরা একমুহূর্ত দেরি না করে মাছধরার জালের ছোট ছোট বয়া ও রসি নিয়ে সাগরে নেমে পড়ি। এভাবে আমরা কয়েকজন মিয়ে অন্তত ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করি।’

গতকাল রাতে উখিয়া থানার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কায় কিসলু বলেন, ‘আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, শতাধিক রোহিঙ্গায় বোঝাই ছিল নৌকাটি। এর মধ্যে ২৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হলেও বাকিরা এখনো নিখোঁজ। শুক্রবার সকালে আরও উদ্ধারকাজ চলবে।’

মিয়ানমারের রাখাইনে কয়েকটি পুলিশফাঁড়ি ও একটি  সেনাক্যাম্পে ২৪ আগস্ট রাতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধন অভিযানে জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার থেকে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল এই নৌকাবোঝাই রোহিঙ্গারা।

সর্বশেষ খবর