শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিভক্ত নিরাপত্তা পরিষদে হলো না কোনো সিদ্ধান্ত

তবুও আশাবাদী বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশা ছিল অনেকেরই। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব বা বিবৃতি ছাড়াই শেষ হয়েছে বিশ্ব সংস্থার সর্বোচ্চ এ ফোরামের বৈঠক। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক মহলকে অবিলম্বে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালেও এ বৈঠক শেষে কোনো যৌথ বিবৃতিও দিতে পারেনি জাতিসংঘ সংস্থাটি। কিন্তু এরপরও আশাবাদী বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের মূল দুই প্রত্যাশা— রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া ও আশ্রিতদের বিভিন্ন মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে বিশ্বসভার কারও তেমন কোনো বিরোধ নেই। এখন বাংলাদেশের প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই উদ্বেগ দীর্ঘমেয়াদে থাকুক। মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন বলছে, রাখাইন সংকটে রাজনৈতিক সংলাপ শুরুর ব্যাপারে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। আলোচনায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে নিরাপত্তা পরিষদেও বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা শুরু হয়। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও চীন বাদে সবাইকে  সোচ্চার হতে দেখা গেছে এ ইস্যুতে। সহিংসতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ, রাখাইনে ত্রাণের অবাধ প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে বেশিরভাগ সদস্য রাষ্ট্র। রাশিয়া ও চীন বলছে, এই সমস্যা বহুপক্ষীয়। চীন মিয়ানমারের বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করে সংলাপের কথা বললেও রাশিয়া সরাসরি বলেছে, রাখাইনে মূল সহিংসতা করছে রোহিঙ্গা মুসলিম সন্ত্রাসীরা। ‘জঙ্গিবাদ’কে রাখাইনের প্রধানতম সংকট আকারে হাজির করে এ সংক্রান্ত তথ্য তাদের কাছে আসছে বলেও দাবি করেছে রাশিয়া। জাপানের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো সোচ্চার অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক থেকে বের হয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন বলেছেন, ‘১৫ সদস্যের ১৩ জনই স্পষ্ট ভাষায় মিয়ানমারের সমালোচনা করেছে। রাশিয়া এবং চীনের বক্তব্য ছিল অস্পষ্ট। এটিই দুশ্চিন্তার কারণ। এমন একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি, যা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, মানবিক বিপর্যয় চরমে উঠেছে, অথচ চীন আর রাশিয়া যেভাবে সোচ্চার হওয়া উচিত, তা দেখলাম না। বৈঠকে মিয়ানমারের বক্তব্যে অসত্য তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে, যা কারোরই কাম্য ছিল না। কারণ, এখন প্রায় সবাই জেনে গেছেন মিয়ানমার সরকারের বর্বরোচিত আচরণের কথা। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকটের ‘যৌক্তিক সমাধান’ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি থেকে দৃষ্টি না সরাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ, তিন দশকের অভিজ্ঞতায় এটা স্পষ্ট  যে, আন্তর্জাতিক মহলের নজর সরে গেলেই দ্বিপক্ষীয় (মিয়ানমার ও বাংলাদেশ) আলোচনা গতি হারিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্তমান তৎপরতা জোরদারের কথা তুলে ধরা হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদে। ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলেও গত আট বছরের মধ্যে এটাই মিয়ানমার নিয়ে প্রথম উন্মুক্ত অধিবেশন ছিল। ২০০৯ সালের পর এ নিয়ে বিভিন্নভাবে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হলেও প্রকাশ্যে  কোনো আলোচনাই হয়নি। এবার কূটনৈতিক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সংকট প্রথম ধাপ অতিক্রম করল। তাই বাংলাদেশ হতাশ নয় উল্লেখ করে শীর্ষস্থানীয় এই কূটনীতিক বলেন, মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কথা বলেছে। আমাদের তাতেও আপত্তি নেই। যদি সেই আলোচনা সফল না হয় তখন আন্তর্জাতিক ফোরামের কাছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে আরেক দফায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদেও ফেরত পাঠাতে চাই এবং এ বিষয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হবে। তবে এর আগে অনেকবার আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে মিয়ানমার আলোচনার টেবিলে বসলেও সময়ক্ষেপণ ছাড়া তেমন কোনো ফল হয়নি। এবার এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সজাগ থাকবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমার সফরে সু চির আমন্ত্রণ : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে মিয়ানমার সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মিয়ানমার সরকারের জাতীয় পরামর্শক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি। বুধবার পাঠানো এক আমন্ত্রণপত্রে অং সান সু চি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে আগামী ২০ ও ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ১৩তম আসেম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সংস্থার মূল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একসঙ্গে বসে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সু চি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, বাংলাদেশ এ আমন্ত্রণ প্রত্যাশা করছিল। তবে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে মিয়ানমারের সু চির দফতরবিষয়ক মন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে ঢাকা আসছেন।

রোহিঙ্গাদের ‘এনভিসি’ কার্ড দেওয়ার ঘোষণা মিয়ানমারের : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের ন্যাশনাল  ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট  সেক্রেটারি উ মিন্ট কেইং। মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতীর খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উ উইন মিত আয়ে রাখাইনের মংডু এলাকায় ‘যত দ্রুত সম্ভব’ রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও পুনর্বাসন শুরু করার কথা জানিয়েছেন। মিত আয়ে বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই বিলিয়ন কিয়াট ব্যয়ের এই কর্মসূচিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার ১৯৯৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শরণার্থীদের নিবন্ধন করা হবে। মংডুর দার গি জার গ্রামে পুনর্বাসনের আগে তাংপিও লেতওয়ে ও না খুয়ে ইয়া গ্রামে তাদের নিবন্ধন করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর