বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দায়িত্ব নিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি

আইনমন্ত্রী জানালেন, প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত । গৃহবন্দী নন, বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল জয়নুল আবেদীনের অভিযোগ, চাপ দেওয়া হয়েছে । দিনভর আলোচনায় ছুটি প্রসঙ্গ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দায়িত্ব নিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি

আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের প্রেক্ষাপটে সমালোচনার মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ?ছুটিতে যাওয়ায় আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে এই দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি রবিবার একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। এরপর গতকালই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। সকালে তার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির বিচারকক্ষের এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। বেশ কয়েকটি মামলার শুনানি গ্রহণ করার পর ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবীদের মধ্যে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্ট গার্ডেনে এই মিলনমেলা চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এরপর বেলা সোয়া ২টায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে হাই কোর্টে বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে ২৪ আগস্ট শেষ অফিস করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। অবকাশ চলাকালে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি দুই সপ্তাহের জন্য বিদেশ সফরে গেলে তার অবর্তমানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অবকাশ শেষে প্রথম কার্যদিবসে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগেই নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে এক মাসের ছুটি চেয়ে রবিবার রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন পাঠান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ছুটি মঞ্জুর করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে ওই দিনই প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। গতকাল সারা দিনই আদালত অঙ্গনসহ দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল বিচারপতি সিনহার আকস্মিক ছুটিতে যাওয়া প্রসঙ্গ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে বিচারপতি সিনহা জানিয়েছেন, তিনি ক্যান্সার এবং নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং সেগুলো সম্পূর্ণ যেহেতু সারেনি তাই তার বিশ্রাম প্রয়োজন। তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন দাবি করেন, বিচারপতি এস কে সিনহাকে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এ নিয়ে করণীয় নির্ধারণে আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে। আজও সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে সকালে আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। ৯টা ৫ মিনিটে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে কার্যক্রম শুরুর পর তা ১০টা পর্যন্ত চলে। বেঞ্চের অন্য বিচারকরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এরপর প্রথা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবীদের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সোয়া ২টায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের ফুল কোর্ট মিটিংয়ে ডাকেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এই মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ফুল কোর্ট মিটিংয়ের পর হাই কোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত : আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (প্রধান বিচারপতি) রাষ্ট্রপতিকে চিঠিতে লিখেছেন, তিনি ক্যান্সার এবং নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং সেগুলো সম্পূর্ণ যেহেতু সারেনি এবং তিনি বলেছেন যে তার আরও বিশ্রামের প্রয়োজন, সেজন্য তিনি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতি আমাদের জানিয়েছেন, আমরা মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে বিশ্বাস করি এবং তিনি বলেছেন তিনি অসুস্থ। এর ওপরে আমি কোনো প্রশ্ন করতে রাজি না। তিনি যেভাবে আমাদের বলেছেন, ঠিক সেভাবে যেহেতু সুপ্রিম কোর্টটা চলতে হবে এবং সংবিধানে যে প্রভিশনস আছে, সে অনুযায়ী এখন একজন চিফ জাস্টিস থাকবে।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটিতে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ষোড়শ সংশোধনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। ছুটি শেষেই বিচারপতি সিনহা কর্মস্থলে ফিরবেন এমন আশা প্রকাশ করে সেজন্য দোয়া করার কথাও বলেছেন আনিসুল হক। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর পর্যবেক্ষণ দেওয়া বা সমালোচনা করা আমাদের অধিকার। আমরা সংক্ষুব্ধ পার্টি হিসেবে এ রায়ের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেব, জাতীয় সংসদে সেটা প্রস্তাব আকারে পাস হয়েছে। সেখানে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেটা পাস হয়েছে। সেই কারণে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিশ্চয়ই নেব। কিন্তু এর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। এর সঙ্গে যদি কেউ কানেক্ট করতে চায় তো আমি মনে করব তাদের একটা দুরভিসন্ধি আছে।’ চাপ দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে— বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘তাদের এই বক্তব্য ভিত্তিহীন। এর কোনো প্রমাণ নেই। তাই এসব ইউজলেস কথাবার্তার জবাব আমার দেওয়ার দরকার নেই।’ এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই উপমহাদেশে হাই কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যখন অটাম ভ্যাকেশন হতো, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের যে ছুটি, সে ছুটির পর আইনজীবীদের সঙ্গে বিশেষ করে অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বিচারপতিরা মিলিত হতেন। অনেক দিন বন্ধের পর নতুন করে কোর্ট শুরু হলো। প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিরা অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে মিলিত হবেন— আগে থেকেই নোটিস দেওয়া ছিল। সেই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতেই আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলাম।’ চাপ প্রয়োগ করে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে আইনজীবী সমিতির এ বক্তব্যের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনজীবী সমিতি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কুক্ষিগত হয়ে পড়ায় এ ধরনের কথা বলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। একজন বা দুজন বিচারপতির জন্য এ দেশে কোনো দিনই বিচার বিভাগের কাজ বন্ধ থাকেনি। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি গৃহবন্দী নন।

চাপ দেওয়া হয়েছে : জয়নুল প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। আইনজীবী সমিতি ‘জরুরি সভা’ করে সরকারের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের এই অভিযোগ আনে। সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্টের রীতি অনুযায়ী আইনজীবীরা যেন ‘গেট টুগেদারে’ আসেন, সে বিষয়ে আগেই চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। কিন্তু তিনি নিজেই ছুটিতে গেছেন বলা হচ্ছে। ইতিহাস বলে, কখনো কোনো প্রধান বিচারপতি দাওয়াত করে এভাবে ছুটি নিয়ে চলে যাননি। আমাদের সেটা জানার দরকার আছে।” তিনি বলেন, ‘আইনজীবী সমিতি মনে করে, প্রধান বিচারপতির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তিনি যাতে এক মাসের জন্য ছুটিতে যান। জাতি জানে, সারা পৃথিবীর মানুষ জানে যে একটি জাজমেন্টের পর তাকে একটি রাজনৈতিক দল, সরকার বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছিল। আমরা মনে করি, সেই চাপের অংশ হিসেবে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি ছুটিতে যাননি, তাকে বাধ্য করা হয়েছে।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, কাউকেই তার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। একটা দেশের প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রে যদি এ ধরনের আচরণ করা হয়, তবে আর অবশিষ্ট কী থাকে?

প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে করণীয় নির্ধারণে বিকালে সিনিয়র আইনজীবীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইনজীবী সমিতির সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম, সুব্রত চৌধুরী, এম কে রহমান, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। বৈঠক শেষে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আকস্মিক ছুটির ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উদ্বিগ্ন। প্রধান বিচারপতির এই আকস্মিক ছুটি সবাইকে মর্মাহত করেছে। এটা বিচারব্যবস্থার জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এটা কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়, সরকারের জন্যও নয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমরা রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চাইব। আগামীকাল (আজ) বিকাল ৪টায় আবারও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এদিকে বিএনপিপন্থি কিছু আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে আদালতে দেখতে চাওয়ার দাবিতে আইনজীবী সমিতি ভবনে মিছিল করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপি : ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হাকে প্রচণ্ড চাপ দিয়ে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে’— এমন দাবি করে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা বলেছেন, কী জন্য তাকে জোরপূর্বক ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, কেন এটা করা হয়েছে, আসল ঘটনাটাই বা কী, তা জানার অধিকার সমগ্র জাতির রয়েছে। মানুষ তা জানতে চায়। একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। দেশের মানুষের আশা-ভরসার শেষ জায়গা হলো সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারে, সেখানেও যদি সরকারের হস্তক্ষেপ হয়, তা হবে দুঃখজনক।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। বৈঠক সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ অংশ নেন। আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধান বিচারপতির ছুটি বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিএনপি। বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পর থেকেই পদত্যাগ করার জন্য সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির ওপর কীভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছিল তা সমগ্র দেশবাসী জানে। সেই চাপের অংশ হিসেবেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আসলে তিনি ছুটিতে যাননি। তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। নেতারা বলেন, সোমবার রাত পর্যন্তও আইনমন্ত্রী কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেল কেউই ছুটির কারণ বলতে পারেননি। অথচ গতকাল দুপুরের পর থেকেই তারা দুজনই ‘প্রধান বিচারপতির ক্যান্সার হয়েছে’ বলে প্রচার চালান। গতকাল (মঙ্গলবার) ‘গেট টুগেদার’ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের আগে থেকেই দাওয়াতও দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। কিন্তু কী এমন হলো যে, তিনি কাউকেই কোনো কিছু না বলে চুপি চুপি ছুটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ত্যাগ করে চলে গেলেন? অতীতে তো এ রকম ঘটনা কখনই ঘটেনি। বিএনপি নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন সংবিধানের অভিভাবক। সংবিধান আজকে অভিভাবকহীন। সংবিধান না থাকলে দেশ থাকে না। দেশ আজকে বিপন্ন।

‘ছুটিতে যাওয়ার সংবাদ সন্দেহজনক’ : প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটিতে যাওয়ার সংবাদ সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেছে বাম মোর্চা। গতকাল সেগুনবাগিচায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ মন্তব্য করা হয়। বাম মোর্চার সমন্বয়ক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে সভায় মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, মোশরেফা মিশু, হামিদুল হক, আবুল হাসান রুবেল, আকবর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুরুতে প্রয়াত কমরেড জসিম উদ্দীন মণ্ডলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সভায় বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার এক মাস ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি স্বেচ্ছায় নাকি জোরপূর্বক অবিলম্বে তা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট করা প্রয়োজন। তারা বলেন, প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হলে তা হবে বিচারব্যবস্থায় কুঠারাঘাতের শামিল।

সর্বশেষ খবর