বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের এক মন্ত্রীর সফরে উচ্ছ্বসিত হলে চলবে না

জুলকার নাইন

মিয়ানমারের এক মন্ত্রীর সফরে উচ্ছ্বসিত হলে চলবে না

লে. জে. (অব.) মইনুল ইসলাম

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের এক মন্ত্রীর সফর অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু এতেই উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম (অব.)। সেনা সদর দফতরের চিফ অব জেনারেল স্টাফের (সিজিএফ) দায়িত্ব পালনের আগে সাবেক বিডিআর-প্রধানের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম (অব.) গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব মন্তব্য করেন। জেনারেল মইনুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের মন্ত্রীর সফর এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ভালো একটি খবর। এ উদ্যোগ এক দিনে নেয়নি মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর দীর্ঘ চাপ তৈরির প্রক্রিয়া আজকের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। এর মাধ্যমে আলোচনার একটি প্রক্রিয়া শুরু হলো। আমি মনে করি, কূটনীতিতে এ ধরনের যোগাযোগ থাকলে তাদের (মিয়ানমার) মনোভাব আমরা (বাংলাদেশ) জানতে পারব। তবে আমি সবাইকে একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলব যে, এক মন্ত্রীর সফরে দেওয়া আশ্বাসেই যেন আমরা খুশি হয়ে না যাই। বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা যেসব চাপ তৈরির চেষ্টা করছিলাম তা যেন অব্যাহত রাখি। চীন-রাশিয়াকে আমাদের পাশে আনার বিষয়ে যে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছিলাম তা যেন অব্যাহত রাখি। মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে গেছে এটা ভেবেই আমরা যদি অন্যান্য চেষ্টা থামিয়ে দিই তাহলে বোকামি হবে। কারণ, অনেক সময় চাপকে ভিন্ন পথে নেওয়ার চেষ্টা হিসেবে এসব কথা হয়ে থাকে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম (অব.) বলেন, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বাইরে থাকা বাংলাদেশিদের সংসদে ফেরার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এটা ছিল একটা ট্রাপ। আন্তর্জাতিক প্রেসার কমানোর জন্য পাকিস্তান এটা করেছিল। সেটাকে ট্রাপ বুঝতে না পেরে যারা এসেছিল তাদের গুলি করে মারা হয়েছে কিংবা পাকিস্তানে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। আবার পরে বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়েও পাকিস্তান লোক দেখানো সম্মত হয়েছিল। সেটাও শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। বরং ওদের বোঝা বাংলাদেশকেই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাই মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনাতেই সব আস্থা রাখা বোকামি হবে। বরং অবশ্যই জাতিসংঘকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, এখন লোক দেখানো পাঁচ হাজার লোক নিয়ে গিয়ে মিয়ানমার যদি আর না নেয়, তাহলে আমরা কী করব। আবার যাদের নিয়ে গেল তাদের যদি মেরে ফেলা হয়, তখন তো আবার আমরাই দোষী হব। মানে সব দোষ আমাদের ওপরই আসবে, জায়গা না দিলেও আমরা দোষী, জায়গা দিলেও আমরা দোষী। বিশ্বসমাজও তখন বলবে, তোমরা দ্বিপক্ষীয়ভাবে এটা করেছ, দায়দায়িত্ব সব তোমাদের। তাই আমি মনে করি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা বা পদক্ষেপ যে কোনো কিছুই এখন জাতিসংঘকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয়ভাবে করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর