বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাখাইনের পোড়া গ্রামে ২০ দেশের কূটনীতিক

মিয়ানমার বলল, প্রত্যাবর্তনের ভিত্তি ১৯৯২ সালের ঘোষণা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিভিন্ন দেশের ২০ কূটনীতিক উত্তর রাখাইনের সংঘাত-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের তত্ত্বাবধানেই তারা সোমবার রাখাইন পরিদর্শন করেন। তা সত্ত্বেও সেখানকার পোড়া গ্রামগুলো ওই কূটনীতিকদের চোখ এড়ায়নি। রাখাইন পরিদর্শন শেষে সেখানকার পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয়ের শামিল বলছেন ওই কূটনীতিকরা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণ তদন্ত এবং সহিংসতা বন্ধ করে মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা জাতিসংঘ তথ্যানুসন্ধানী মিশনকে রাখাইন পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়াসহ কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ওই কূটনীতিকরা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি- আরসার কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম উল্লেখ করে তা বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশীয় সংবাদমাধ্যম সাউথ এশিয়ান মনিটর জানায়, সোমবারের ওই পরিদর্শনে বিদেশি দূতাবাস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ সংস্থা, মন্ত্রিসভা এবং ইরাবতীসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের ৬৬ জন সদস্য অংশ নেয়। এদিকে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কূটনীতিকরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ওই এলাকার ছয়টি গ্রামের স্থানীয় রাখাইন, মুসলিম, ম্রো ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতর থেকে গতকাল দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সালের  যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতেই রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন হবে। সোমবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ের বৈঠকের বিষয়ে বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হলো। বৈঠকের বিষয়ে মিয়ানমারের মন্ত্রী ঢাকায় কোনো মন্তব্য না করলেও একদিন পর দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতর এই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হলো। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা  অং সান সু চির ১৯  সেপ্টেম্বও দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তার দফতরের মন্ত্রী। সু চির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের যাচাই ও প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত রয়েছে। ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ঘোষণা অনুসারে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এই যৌথ ঘোষণা অনুসারে ১৯৯২ থেকে ২০০৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৫ জনকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকে  ২০০০ সালের ১৪ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যকার বৈঠকে সম্পাদিত চুক্তির প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন।  এতে আরও বলা হয়েছে, উভয় দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে দ্বিপক্ষীয়ভাবে দুই দেশের মধ্যে এই ইস্যুগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা সম্ভব। বিবৃতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরসাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাধারণ শত্রু বলে উল্লেখ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথাও জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকের শেষ দিকে মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেপিদো সফরের আমন্ত্রণ জানান। সীমান্ত সুরক্ষা, ১৯৯২ সালের এপ্রিলের  যৌথ বিবৃতি অনুসারে যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফিরতে চায়, তাদের যাচাইকরণ বিষয়ে পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশের মন্ত্রীকে এই সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। বৈঠকের পর একটি মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। এতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। এতে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বাংলাদেশের মন্ত্রীকে মিয়ানমার সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে আর বলা হয়েছে, আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ ও উষ্ণ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রভাব চাইছেন ২১ মার্কিন সিনেটর : রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে চিঠি দিয়েছেন ২১ মার্কিন সিনেটরের একটি দল। বিশেষ করে যারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে এবং টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে তাদের কাছে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ওই মার্কিন সিনেটররা লিখেছেন, ‘গত কয়েক বছরে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের আশঙ্কা, যদি আমরা এখনই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না করতে পারি, তবে সেসব অগ্রগতিমূলক অর্জন তছনছ হয়ে যাবে। এ ভয়াবহ নৃশংসতার অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রশাসনের কাজ করার, যেখানে দরকার সহায়তা দেওয়ার এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার এখনই সময়।’

চিঠিতে মার্কিন সিনেটররা লিখেছেন, ‘রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত এবং যারা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে সেসব মানুষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়াটা স্পষ্টত আমাদের নৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ। জরুরি ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান না করা হলে এ সংকট মিয়ানমার, ওই অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি বয়ে আনবে।’

চিঠিতে মার্কিন সিনেটররা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। তারা মনে করছেন, সংকটের এমন একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, যা সুদীর্ঘ দিনের জাতিগত ও ধর্মীয় দ্বন্দ্বকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। সেই সমাধানসূত্র খুঁজে পেতে ট্রাম্প প্রশাসনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে ২১ মার্কিন সিনেটর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে।

সর্বশেষ খবর