শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কমেছে বেসরকারি ত্রাণের প্রবাহ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, উখিয়া (কক্সবাজার) ঘুরে

হঠাৎ করেই কমে গেছে রোহিঙ্গাদের জন্য আসা বেসরকারি ত্রাণের প্রবাহ। গতকাল কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালীসহ বেশ কয়েকটি ত্রাণ বিতরণ ক্যাম্পে দেখা গেছে, লম্বা লাইন আছে কিন্তু ত্রাণ নেই। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত উখিয়া ডিগ্রি কলেজের ত্রাণ ক্যাম্পেও ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। ত্রাণপ্রবাহ কমে গেল কেন জানতে চাইলে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলেছে, দুই দিন ধরে ত্রাণবাহী যানবাহন প্রবেশ করতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নতুন করে অনুমতিপত্র নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রিত ১৩টি ক্যাম্পে ত্রাণ নিয়ে যেতে দাতাদের উৎসাহিত করছেন। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ১৪টি ক্যাম্পে ত্রাণবাহী যানবাহন প্রবেশে জেলা প্রশাসনের অনুমতি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল শপিং কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে চার কাভার্ড ভ্যান ত্রাণ নিয়ে আসেন নওশাদ চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি। তিনি সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার লিংক রোড দিয়ে ত্রাণবাহী গাড়ি নিয়ে প্রবেশের মুখে বাধাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তা আটকে দিয়ে জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র নিয়ে আসতে বলে। সেখানে ত্রাণ রেখেই চলে আসেন উখিয়ায় সেনাবাহিনীর প্রধান ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে। সেখানে তিনি বিষয়টি  তুলে ধরেন। এরপর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। নওশাদ চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার রাত ১১টা থেকে ত্রাণ নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি। ভোরে এসে কক্সবাজারে পৌঁছালেও সকালেই পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ভালো কাজে এসে এমন বাধার মুখে পড়ব ভাবতে পারিনি।’ ঢাকা থেকে আসা ত্রাণ ও মেডিকেল ক্যাম্পের প্রতিনিধি অধ্যাপক নূর হোসেন বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেই বুধবার ত্রাণ ও মেডিকেল ক্যাম্প নিয়ে উখিয়ার উদ্দেশে রওনা হই। এর আগেও এসেছিলাম। কিন্তু এবার টেকনাফ লিংক রোডে পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। তারা জানায়, জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। এ নিয়ে আমাদের প্রায় চার ঘণ্টা বিলম্বে পড়তে হয়।’

জানা যায়, সেনাবাহিনী ত্রাণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকেই অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। জেলা প্রশাসনসহ নিজস্ব কিছু ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর ত্রাণ বিতরণকাজে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। লে. কর্নেল রাশেদ ও মেজর রাশেদের নেতৃত্বে উখিয়া ডিগ্রি কলেজে প্রধান ত্রাণ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে প্রতিদিনই ত্রাণ গ্রহণ ও বিতরণ চলছে। প্রতিদিনই বিতরণ করা ত্রাণের হিসাব বোর্ডে প্রদর্শন করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী ছাড়াও গতকাল পর্যন্ত প্রায় অর্ধকোটি নগদ টাকা সেনাবাহিনীর হাতে জমা পড়েছে। এগুলোও সুষ্ঠুভাবে তারা বণ্টন করছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ত্রাণ দিতে কারও বাধা নেই। তবে শুরু থেকেই জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণেই ত্রাণ কার্যক্রম চলে আসছিল। দেশি-বিদেশি সব ত্রাণই জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে বিতরণ হবে—এটাই নিয়ম। সেই নিয়মের এখনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সেনাবাহিনী সহায়তার জন্য এসেছে। তারা তা-ই করছে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবতারণা হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। এখনো সবাই ত্রাণ পাচ্ছে। জানা যায়, জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের নেতৃত্বে শুরু থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেন দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন সাইফুল আশরাফ জয় ও জুয়েল আহমেদ। তারা সার্বক্ষণিক রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও অন্যান্য সেবা দিয়ে আসছেন। রোহিঙ্গাদের তাঁবু নির্মাণেও তারা সর্বক্ষণ মাঠে ছিলেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ত্রাণ বিতরণে কোনো সমন্বয়হীনতা আছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ারুল্লাহ নাছের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। শুরু থেকেই একটি নিয়মের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ চলছে। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের সহায়তা দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে কোনো ভুল বোঝাবুঝিও নেই।’

সর্বশেষ খবর