শিরোনাম
সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

যে কোনো সময় যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের, আইসিডিডিআরবিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যে কোনো সময় যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া

এস কে সিনহা

অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটি নেওয়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) যে কোনো সময় সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন। সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানে তিনি সে দেশে যেতে পারেন। এরই মধ্যে তিনি তিন বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অসুস্থতা ও ছুটিতে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে আইনজীবী সমিতির সরকার সমর্থিত ও বিএনপিপন্থি অংশ।

প্রধান বিচারপতি গতকাল ঢাকায় কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন। মহাখালীর আইসিডিডিআরবিতে গিয়ে তিনি রক্ত পরীক্ষার জন্য দিয়েছেন। বাসায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বন্ধু-বান্ধবরা। গত সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারকে ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। এখন যে কোনো সময় অস্ট্রেলিয়ায় তার বড় মেয়ে সূচনা সিনহার কাছে চলে যাবেন বলে মনে করছেন বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে তোপের মুখে পড়া প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দেশের বাইরে যাওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সেন্টারে গিয়ে ভিসার আবেদন করেন তিনি ও তার স্ত্রী সুষমা সিনহা। সেদিনই তাদের বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিন বছরের ভিসা অনুমোদন করেন ভিসা কর্মকর্তারা। তখন থেকেই শুরু হয় মেয়ের কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি। পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া প্রধান বিচারপতির বড় মেয়ে সূচনা সিনহা এখন শিক্ষাজীবন শেষে সে দেশেই বসবাস করছেন। দুই মেয়ের অপরজন আশা রানী সিনহা ভারতে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে এখন কানাডায় আছেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের এক মাসের অবকাশকালীন ছুটিতে সেখান থেকেও ঘুরে এসেছেন তিনি। সেখান থেকে ফিরেই ২ অক্টোবর এক মাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ছুটির আবেদন জমা দেওয়ার পর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রধান বিচারপতি। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মহাখালীতে আইসিডিডিআরবিতে যান তিনি। আইসিডিডিআরবির ডায়াগনস্টিক ইউনিটের ইনফরমেশন ডেস্কের দায়িত্বে থাকা নূরুন্নাহার বলেন, তিনি সকালে ডায়াগনোসিসের কাজে এসেছিলেন। কয়েকটি পরীক্ষা করিয়ে চলে গেছেন। আইসিডিডিআরবির ডায়াগনোসিস ইউনিটের দায়িত্বরত স্বাস্থ্য পরীক্ষক এম এ রাজ্জাক বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এসেছিলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি যে স্লিপ নিয়ে এসেছিলেন, সে অনুযায়ী আমি পরীক্ষা করে দিয়েছি।

আইসিডিডিআরবি থেকে সরাসরি হেয়ার রোডের বাসায় চলে যান প্রধান বিচারপতি। সেখানেই সন্ধ্যায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ। প্রায় একই সময়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান।

এর আগে গত শনিবার দিনভর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কাজে সাক্ষাৎ করেন বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার বন্ধু ব্যবসায়ী আতিক চৌধুরী। বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে। এদিনই সুপ্রিম  কোর্টের আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও হাই কোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অর্থ) ফারজানা ইয়াসমিন ফাইলপত্র নিয়ে সাক্ষাৎ করেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। আগের দিন শুক্রবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার বাসভবনে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও সুপ্রিম কোর্টের  রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। ২ অক্টোবর ছুটির আবেদন করা প্রধান বিচারপতি টানা তিন দিন বাসা থেকে বের না হওয়ায় যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় তা শেষ হয় বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এখনো বলছে, প্রধান বিচারপতিকে চাপ প্রয়োগ করে ছুটি নিতে বাধ্য করে এখন বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।

জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এস কে সিনহা ১৯৭৪ সালে সিলেট বারে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে আইন পেশা শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে হাই কোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। হাই কোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি হন ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই। বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি অবসরে যাবেন।

আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অসুস্থতা ও ছুটিতে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে আইনজীবী সমিতির সরকার সমর্থিত ও বিএনপিপন্থি অংশ। আইনজীবী সমিতির সরকার সমর্থিত অংশটি সংবাদ সম্মেলন করে আইনজীবী সমিতির উত্তর হলে। এতে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সহ-সভাপতি  মো. অজিউল্লাহ বলেন, সভাপতি ও সম্পাদক সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নামে ভিত্তিহীন বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। কারণ রাষ্ট্রের ভিভিআইপি ব্যক্তি হিসেবে প্রধান বিচারপতির জীবনযাপন ও কর্মপরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রটেকশন ও প্রটোকল রয়েছে। এটা ভঙ্গ করে তার অনুমতি ব্যতীত কোনো ব্যক্তিই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ বা দেখা করতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব বিচারকাজে প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা করা। এর বাইরে প্রধান বিচারপতির ছুটি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সভাপতি আবদুল বাসেত মজুমদার প্রমুখ।

অপরদিকে, আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থি অংশ মানববন্ধন পালন করে বার ভবনের সামনে। মানববন্ধন  শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

সর্বশেষ খবর