মিয়ানমারের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী কয়েক লাখ রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজার জেলার ৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে একযোগে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সম্প্রতি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব সংশ্লিষ্ট এলাকা সফর করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ২ অক্টোবর এটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর আগে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ক্যাম্প পরিদর্শন করে গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সার্কিট হাউস মিলনায়তনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা করেন সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব। ওই সভায় রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : নিবন্ধন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান, মিয়ানমারের নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন কাজে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রয়োজনীয় প্রচারণা চালাতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ; নিবন্ধন কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া; বিদ্যুৎ না থাকলে ১২টি জেনারেটরের ব্যবস্থা করা; নিবন্ধন কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর কর্তৃক প্রয়োজনীয় আর্থিক চাহিদা নিরূপণ করে জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো এবং নির্ধারিত ছকে নিবন্ধন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্র হতে দৈনিকভিত্তিক তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো। সভার আগে ওই দিন কক্সবাজার জেলার কুতুপালং, মাইংখালী এবং নয়াপাড়া আশ্রয় ক্যাম্পে স্থাপিত ৩টি নিবন্ধন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। তিনি সেখানে আশ্রয় প্রার্থী সব মিয়ানমার নাগরিকের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেই সঙ্গে নিবন্ধন কেন্দ্রের বাইরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত কেন্দ্রে জরুরিভাবে আনা সম্ভব না হলে, প্রয়োজনে বিকল্পভাবে কীভাবে দ্রুত নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায় সে ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। সভায় বিজিবি ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি নিবন্ধন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর সুবিধা, নিবন্ধন কাজে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বৃদ্ধি, স্টেশনারি মালামাল, ল্যাপটপসহ নিবন্ধন কেন্দ্রের ব্যয় নির্বাহসহ বিভিন্ন বিষয় সরবরাহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
যে কারণে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন : কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় প্রার্থী মিয়ানমারের নাগরিকদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ৫টি নিবন্ধন কেন্দ্র থেকে ৫০টির বেশি কম্পিউটার দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে নিবন্ধনের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ছাড়িয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র নিরূপণ করার স্বার্থেই বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয়দান সরকার সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছে। এত বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের আশ্রয়দান বাংলাদেশের জন্য কষ্টকর হলেও এ মানবিক সংকটের সময়ে রোহিঙ্গাদের সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আশ্রয়ের মেয়াদ দীর্ঘ হলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া আশ্রয় প্রার্থীরা কোনো ধরনের অপরাধে যাতে জড়িয়ে না পড়ে, উপরন্তু মাদক বা অন্য কোনো অবৈধ কিছু নিয়ে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জানা গেছে, সরকারের এ কাজে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা থাকবে।