মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিশুদের ব্রিটিশ পাসপোর্টে পরিবর্তন চান

প্রতিদিন ডেস্ক

শিশুদের ব্রিটিশ পাসপোর্টে পরিবর্তন চান

ব্রিটেনে বিরোধী লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক শিশুদের ব্রিটিশ পাসপোর্টে কিছু পরিবর্তনের দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলছেন, পাসপোর্টে যদি পিতামাতা দুজনেরই নাম থাকে, তাহলে অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। খবর : বিবিসি বাংলার।

প্রসঙ্গত, বর্তমান ব্রিটিশ পাসপোর্টে শুধু শিশুর নামই উল্লেখ করা থাকে, সেখানে বাবা বা মার নাম থাকে না। সংবাদ সূত্র জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কন্যা। সম্প্রতি তিনি তার বাচ্চা মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে ফ্রান্সে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী কর্মীরা তাকে ট্রেনে উঠতে দিচ্ছিলেন না। কারণ বাচ্চার নামের যে পদবি তার সঙ্গে বাচ্চার নামের পদবির মিল ছিল না। হোম অফিস বলছে, শিশু পাচার বন্ধ করার জন্য মা ও শিশুর পদবিতে মিল না থাকলে মায়েদের এভাবে আটকে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এটা করা হয় শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশে। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘বাচ্চার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রমাণ করার জন্য গত পাঁচ বছরে এরকম ছয় লাখ নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এজন্য অনেককেই, যাদের কাছে তখন বিয়ের কিংবা জন্মের সার্টিফিকেট ছিল না এবং স্বামী কিংবা পার্টনারকে ছাড়া ভ্রমণ করছিলেন— তাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।’ ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে তিনি বলেন, এরকম ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে, কারণ অনেক নারীই এখন বিয়ের পর তাদের নামের পদবি বদলাতে চান না। এই ঘটনার পর এমপি টিউলিপ সিদ্দিক হোম অফিসে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন বাচ্চাদের পাসপোর্টে পিতা ও মাতা দুজনের নামই লিখে দেওয়ার জন্য, যাতে বিমানবন্দরে ও সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না পদবি পরিবর্তন না করার জন্য আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে। আমি ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেছি, আমার নিজের একটা জীবন আছে, আমার নিজের পদবিরও একটা মর্যাদা আছে। আমি জানি কেন তাদেরকে থামানো দরকার। অসহায় শিশুরা যাতে নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্যই এরকম করা হচ্ছে। কিন্তু এটাও মানতে হবে যে বহু সন্তানের নামের সঙ্গে তাদের মায়ের পদবি থাকে না।’ টিউলিপ সিদ্দিক জানান, ছুটি কাটিয়ে তিনি যখন ফিরে আসছিলেন তখন তার সঙ্গে ছিলেন স্বামী ক্রিস পার্সি এবং তাদের দেড় বছরের কন্যা আজালিয়া। ছোট্ট শিশু থাকার কারণে টিউলিপ সিদ্দিককে খুব দ্রুত পার হয়ে যাওয়া যায়- এমন একটি লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। কিন্তু ব্রিটেনে ফিরে আসার জন্য ইউরোস্টার ট্রেনে ওঠার আগে ইউকে বর্ডার তাকে থামিয়ে দেয়। টিউলিপ বলেন, ‘আমার মেয়ে দেখতে আমার চেয়ে একেবারেই আলাদা। সে তার বাবার মতো দেখতে। ইউকে বর্ডারের একজন তখন অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আমার ও আমার মেয়ের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এই মেয়েটি কে? এরকম প্রশ্নে আমি অবাক হই। তিনি তখন আবার জানতে চাইলেন। আমি বললাম, আমার মেয়ে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আমাদের একই পদবি নেই কেন। তিনি তখন আমার বিয়ের ও জন্মের সার্টিফিকেটও দেখতে চাইলেন। এটা নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হলো। তারা আরও কিছু কাগজপত্র দেখতে চাইলেন। কিন্তু মেয়েটা তখন কাঁদছিল, আর মা মা বলে ডাকছিল। কিন্তু এতেও তারা নিশ্চিন্ত হতে পারেননি।’ টিউলিপ সিদ্দিক জানান, তখন তার পেছনে লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়। এমন একটা পরিবেশের ফলে তিনি অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। তারপর আমি যখন আমার স্বামীকে খুঁজে আনলাম তখন তারা আমাকে বাচ্চাকে নিয়ে চলে যেতে দিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘বাচ্চার পাসপোর্টে পিতা ও মাতা দুজনের নাম থাকলে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী লোকজনদের জন্য কাজটা সহজ হবে। একই সঙ্গে আর কোনো মাকেও এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।’

সর্বশেষ খবর