শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ এনজিও কর্মীরাও হামলার শিকার নিজেদের ভিতরও বাড়ছে ঝগড়া-বিবাদ

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা

নতুন রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কক্সবাজারের উখিয়া থেকে গতকাল তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ, এনজিও কর্মকর্তা ও ত্রাণ সহায়তা দিতে আসা লোকজন। আবার একটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা, মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ কর্মের সঙ্গেও। ক্যাম্পে তাদের নিজেদের মধ্যেও বাড়ছে ঝগড়া-বিবাদ। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের হামলার শিকারে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। আর বিভিন্ন সময় আহত হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর রোহিঙ্গা দুই সহোদরের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবু ছিদ্দিক। দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২১ অক্টোবর ভোরে তিনি মারা যান। মহিষ বিক্রিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোছেনের ছেলে কালা মিয়া ও ধলা মিয়ার সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আবু ছিদ্দিককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। সর্বশেষ গত শনিবার টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে রোহিঙ্গা নারী দিল বাহার ও তার স্বামী সৈয়দ আহমদ অবৈধভাবে একটি মুদির দোকান বসানোর চেষ্টা করছিল। এতে নয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) কবির আহমদ বাধা দিলে রোহিঙ্গা দম্পতি তার ওপর চড়াও হয়। এ ঘটনায় এসআই কবিরের মাথা ফেটে গেলে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে ভর্তি করান। এর আগে গত এক মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটক, ত্রাণ দিতে গিয়ে স্থানীয় এনজিও মুক্তির কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, রোহিঙ্গার হাতে উখিয়ায় মুরগি ব্যবসায়ী আহত হওয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একে অপরের হামলায় এক রোহিঙ্গা খুন হয়। ৭ অক্টোবর কুতুপালংয়ের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার পার্শ্ববর্তী তেলপাড়া খাল থেকে এক অজ্ঞাত রোহিঙ্গার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর বাইরে প্রায় প্রতিদিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে বলে জানান স্থানীয়রা।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি সিন্ডিকেট ইয়াবা ও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানান স্থানীয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতিমধ্যে তারা কয়েকজনকে চিহ্নিত ও আটক করতে সক্ষম হলেও মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি নিবন্ধনের আওতায় আনা হলে অপরাধীদের চিহ্নিত করা আরও সহজ হবে বলে মনে করছে পুলিশ প্রশাসন।

উখিয়া-টেকনাফের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বলেন, ‘লাখ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে কিছু সংখ্যক উচ্ছৃংখল ও অপরাধপ্রবণ লোক থাকবে— এটাই স্বাভাবিক। তবে এরা যেন সামাজিক পরিবেশ অস্বাভাবিক করতে না পারে সেদিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে। অপরাধের মাত্রা যেন আর না বাড়ে সেদিকেও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আজ উখিয়া-টেকনাফের মানুষ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের নিরাপত্তা দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। আজকে একজন খুন হয়েছে, কাল ১০ জন খুন হতে পারে। কারণ কমিউনিটি পাওয়ার মানুষকে হিংস  ও অপরাধী করে তোলে। এসব বিষয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে।’

রোহিঙ্গা ঢল সামলাতে যখন ব্যস্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তখন ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। এ কাজে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন উখিয়া- টেকনাফের স্থানীয় লোকজন। প্রশাসনের চোখ ও ব্যস্ততাকে ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গত দুই মাসে বড় বড় ইয়াবার চালান খালাস হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপ হাইওয়ে পুলিশের হাতে ৮০ হাজার ও ২ লাখ ৫৫ হাজারের দুটি চালান ধরা পড়েছে। এ ছাড়া বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র‍্যাবের অভিযানেও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের জানান, সম্প্রতি বালুখালী হাইওয়ে পুলিশ ও উখিয়া থানা পুলিশ দুটি বড় ইয়াবার চালানসহ পাচারকারীদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে। ব্যস্ততার মাঝেও উখিয়া পুলিশ ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর