শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নেতৃত্ব সংকট ও গ্রেফতার আতঙ্কে বিপর্যস্ত জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াতে ইসলামীতে নেতৃত্ব সংকট চরম আকার ধারণ করছে। দলটির আমির, নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ প্রায় সব নেতা এখন জেলে। জামায়াতের ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মাত্র দুজন প্রকাশ্যে থাকলেও তারা দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন। ধারাবাহিকভাবে প্রবীণ নেতাদের পদ শূন্য হওয়ায় দলে কমান্ড দেওয়ার কেউ থাকছে না। এ ছাড়া দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। অন্যদিকে, ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে দলের মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি তালাবদ্ধ। এরপর পর্যায়ক্রমে সারা দেশে জামায়াতের কার্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফের চাপের মুখে পড়লো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের ধারাবাহিকতায় সাত বছর পর একসঙ্গে সোমবার আটক হলেন দলটির আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ ৬ শীর্ষ নেতা। এতে দ্বিতীয় দফায় নেতৃত্বের সংকটের মুখে পড়লো জামায়াত। আমির-নায়েবে আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতাদের আটক-গ্রেফতারে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। তৈরি হয়েছে হতাশাও।

নেতৃত্বের সংকট: গত ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে আটক হন জামায়াতের প্রথম সারির চার নেতাসহ ৯ জন। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা  মহানগর দক্ষিণ শাখার আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও কেন্দ্রীয় মসজলিসে শুরার সদস্য আবদুস সবুর ফকির, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাওলানা ফরিদুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য। ৯ অক্টোবর জামায়াতের প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতাকে আটকের মধ্য দিয়ে আবারও নেতৃত্বের সংকটে উপনীত হলো। কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও সারা দেশে জামায়াতের প্রায় কয়েকশ আটক হয়েছে। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্যসহ বিভিন্ন জেলার আমির ও সেক্রেটারি রয়েছেন। এর আগে ২০১০ সালের ২৯ জুনে একদিনে একসঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইতিমধ্যে ফাঁসিতে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। নিজামী-মুজাহিদের গ্রেফতারের পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আমিরের দায়িত্ব পান মকবুল আহমাদ। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মনোনীত হন (বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কারাগারে থাকা) এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২০১২ সালে ২২ আগস্ট তাকে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্বে আসেন সিলেটের প্রভাবশালী নেতা ডা. শফিকুর রহমান। পরে মকবুল আহমাদ সাড়ে ৬ বছর এবং শফিকুর রহমান ৫ বছর যথাক্রমে আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ১৭ অক্টোবর  মকবুল আহমাদ আমির নির্বাচিত হন।

ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে আসছেন যারা: মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ফের ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বের মুখে পড়লো জামায়াত। গত বছরের ১৭ অক্টোবর আমির হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নতুন কমিটি মনোনয়ন দিয়েছিলেন আমির মকবুল আহমাদ। ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান দায়িত্ব পেয়েছেন। আর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুমকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

গ্রেফতার আতঙ্ক: সূত্র জানায়, বিগত এক মাসের বেশি সময় ধরেই জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু হয়। আমির-নায়েবে আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতাদের আটক গ্রেফতারে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। সূত্রটি জানায়, চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দ্বন্দ্ব মেটাতে ঢাকায় এসেছিলেন। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারে সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে কাজ করে। সূত্র জানায়, গোলাম আযমের মৃত্যু, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর জামায়াতে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়। এরপরও গত ছয় বছরে নানা চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে নতুন কমিটির নেতৃত্বে নীরবে সংগঠিত হচ্ছিলেন নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে চলতি বছরের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অঞ্চলভেদে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোয় আগামী একবছর রাজপথ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল দলটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে ফের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতারে নেতা-কর্মীদের মন ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর