সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চুল কেটে দিল বখাটে আত্মহত্যা ছাত্রীর

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

চুল কেটে দিল বখাটে আত্মহত্যা ছাত্রীর

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকি মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আটুলিয়া ইউনিয়নের বয়ারসিং গ্রামের জয়শ্রী চক্রবর্তী। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ থেকে ফিরছিল সে। এ সময় তার পিছু নেয় ভবঘুরে যুবক শেখর মণ্ডল ও তার সহযোগীরা। বাড়ির কাছে নওয়াবেকি বাজারের বাঁশঘাটায় পৌঁছায় জয়শ্রী।  গ্রামের বাসিন্দারা জানান, জয়শ্রী ও শেখরকে দেখা যায় নিকটস্থ বেড়িবাঁধের ওপর। একপর্যায়ে শেখর নানাভাবে কথা বলতে বলতে ঘাড়ে হাত দিলে জয়শ্রী তাকে ধাক্কা দেয়। আপত্তি জানিয়ে  জয়শ্রী  বলে, ‘আমি ব্রাহ্মণঘরের মেয়ে। তুমি শূদ্র। তোমার সঙ্গে তো আমার বিয়ে হতে পারে না।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে জয়শ্রীর মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে নেয় শেখর। তার সাঙ্গোপাঙ্গরা মেয়েটির গালে কয়েকটি চড় বসিয়ে দেয়। শেখরের তিন-চার বন্ধু তার পরনের ওড়নাও কেড়ে নেয়। এতে ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে জয়শ্রী দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে বাড়ি ফিরে আসে। জয়শ্রীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়িতে পৌঁছে কাউকে কিছুই বলেনি জয়শ্রী। একপর্যায়ে মা সুচিত্রাকে ঘটনার কথা জানিয়ে ক্ষোভে-দুঃখে ফেটে পড়ে সে। পরে তাকে খোঁজাখুঁজি করেও আর পাওয়া যায়নি। অবশেষে সন্ধ্যায় জয়শ্রীকে পাওয়া যায় বাড়ির ঠাকুরঘরে ঝুলন্ত অবস্থায়। নিজের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঠাকুরঘরের আড়ায় ফাঁস লাগায় জয়শ্রী। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসক তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানেই মারা যায় জয়শ্রী চক্রবর্তী (১৭)। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন জয়শ্রীর নিথর দেহ ফিরে আসে বাড়িতে। কলেজছাত্রী জয়শ্রীর পরিবারের কান্না যেন থামছে না। শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা পূজারী মাখন চক্রবর্তী। আর এখন কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন মা সুচিত্রা চক্রবর্তী। পাঁচ দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া সবই বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবারের সবাই। শুধু বলছেন, ‘আমাদের আদরের জয়শ্রী কই!’ পাঁচ দিন ধরে শোকের মাতম চলছে পরিবারটিতে। কলেজের সহপাঠীরাও কেঁদে কেঁদে বলছে, ‘উত্ত্যক্তকারী ও প্ররোচনাকারীদের ফাঁসি চাই।’ উত্ত্যক্তকারীদের কারণে জয়শ্রীর আত্মহননের ঘটনায় শুক্রবার থানায় মামলা হলেও পুলিশ বখাটে শেখর মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাই জয়শ্রীর কলেজের সহপাঠীরা জড়িতদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে আজ সোমবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। জয়শ্রীর পিসতুতো ভাই কাজল চক্রবর্তী জানান, বাড়ির পাশে শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, শুক্রবার পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী শ্যামনগর থানায় জয়শ্রীর বাবা পূজারী মাখন চক্রবর্তী মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় শেখর মণ্ডলকে। শেখর আটুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুপোট গ্রামের রঞ্জন মণ্ডলের ছেলে। পুলিশ বলছে, এ ঘটনার পর থেকে শেখরের বাড়িতে তালা ঝুলছে। ওর বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। তালা ঝুলছে শেখরের বাবা রঞ্জন মণ্ডলের চালের দোকানেও। শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মান্নান আলী জানান, এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শুক্রবার আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেছেন জয়শ্রীর বাবা পূজারী মাখন চক্রবর্তী। মামলায় শেখর মণ্ডলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিন-চারজন যুবককে আসামি করা হয়েছে। এদিকে নওয়াবেকি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ একরামুল কবির বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের সন্তান জয়শ্রী। কলেজ থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে বখাটেদের উত্ত্যক্তের শিকার হওয়ায় আত্মহত্যা করেছে সে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। এত বড় ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো বখাটে শেখর মণ্ডলকে গ্রেফতার করেনি। এ কারণে সোমবার জড়িতদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে।’ শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু জানান, জয়শ্রীরা তিন বোন এক ভাই। ওদের একমাত্র ভাই কৃষ্ণ চক্রবর্তী নবম শ্রেণির ছাত্র।

সর্বশেষ খবর