মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাসদ থেকে জনগণ কিছুই আশা করে না

সৈয়দ আবুল মকসুদ

জাসদ থেকে জনগণ কিছুই আশা করে না

বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ’৭৫-এর পর পরই জাসদে শুরু হয় বিভক্তি এবং নানা রকম ষড়যন্ত্র। সেই বিভক্তি আদর্শের ব্যাপারে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি নেতৃত্ব নিয়ে। প্রথম বিভক্তির পরই জাসদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন উপ-দলে বিভক্ত হয়ে গত ৪২ বছরে বিভিন্ন শাসক দলের লেজুড়বৃত্তি করেছে দলটি। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, কেউ ক্ষমতায় গিয়ে শেষ হয়ে গেছেন, কেউ ক্ষমতার বাইরে থেকে কিছুই না পেয়ে হাহাকার করে শেষ হয়েছেন। জাসদ থেকে দেশের মানুষ এখন আর কিছুই আশা করে না। একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক শক্তির এমন শোচনীয় অপচয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই।

আজ জাসদের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলটির জন্মের পর থেকে নানা বিতর্ক নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। তার মতে, ‘আমার নিজের ধারণা, জাসদ যদি স্বাভাবিক রাজনীতির পথে থাকত তাহলে বঙ্গবন্ধুর সময়ই প্রধান বিরোধী দল হতে পারত। তারা সে পথে যায়নি। সরকারও তাদের সেই সুযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, ’৭৩-এর নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হতো, তাহলে জাসদ অন্তত ২০-৩০টি আসন পেত। তাহলে তারা সংসদীয় রাজনীতিতে থাকতে পারত। তাদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করায় তারা উগ্রপন্থা বেছে নেন। জাসদ গঠন প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নতুন স্বাধীন দেশে যখন বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ, তখন শাসক দলের মধ্য থেকেই জন্ম হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের। রাষ্ট্রের মূলনীতির একটি ছিল সমাজতন্ত্র। মার্কসবাদী দল ছাড়া বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দল কীভাবে সমাজতস্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে—তা নিয়ে মানুষের সন্দেহ ছিল। সেই সময় কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান নিয়ে গঠন করেন জাসদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং তার বাইরের বিভিন্ন সংগঠনের বিপুলসংখ্যক তরুণ নেতা-কর্মী এই দলে যোগ দেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে দলটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে হঠাৎ এই জনপ্রিয়তায় নেতাদের মাথা খারাপ করে দেয়। বিশিষ্ট এই লেখক বলেন, ওই সময় জাসদ জনগণের মধ্যে না গিয়ে সশস্ত্র বিপ্লব ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটাবে এমন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ এই সমতলভূমিতে কীভাবে বিপ্লব ঘটাতে হয়, সে সম্পর্কে নেতাদের কোনো ধারণাই ছিল না। গুপ্তহত্যা দিয়ে বিপ্লব হয় না, সন্ত্রাস হয়। সরকারও জাসদের সশস্ত্র নেতা-কর্মীদের সশস্ত্র উপায়েই দমন করতে থাকে।’

তিনি বলেন, এ সময় হাজার হাজার জাসদ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। জাসদের লোকেরা সরকারি দলের লোকদের হত্যা করেছেন। একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মনসুর আলীর বাসভবন ঘেরাও করতে যাওয়া ছিল তাদের বড় হঠকারিতা। জাসদ সমর্থক একজন বিদেশি পিটার কাসর্টার্সের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশের একজন বন্ধু ছিলেন। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র হবে—তা তিনি বিশ্বাস করতেন। তিনি কখনো আমার বাড়িতেও থেকেছেন। তার কাছে জাসদের নানান রণকৌশলের কথা শোনতাম। নেতাদের সঙ্গেও ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

 

সর্বশেষ খবর