বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্রিসের কথা বলে ওরা পাঠায় লিবিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রিসের কথা বলে ওরা পাঠায় লিবিয়া

আট লাখ টাকা চুক্তিতে গ্রিসে যাওয়ার জন্য দালালের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন মালয়েশিয়া থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে আসা যুবক এ এম এরশাদ মিয়া। দালাল মোশাররফ রাজধানীর রেজওয়ান ওভারসিস (আরএল-১৩৬০) এর মাধ্যমে এরশাদসহ আরও দুজনকে ভিসা প্রসেসিং এবং বিএমইটি কার্ড দিয়ে দেন। গ্রিসে পাঠানোর কথা থাকলেও তাদের দেওয়া হয় কেবল ইস্তাম্বুলের বিমান টিকিট। বলা হয়, ইস্তাম্বুলে পৌঁছার পর ই-মেইলের মাধ্যমে পরবর্তী গন্তব্যের বিমান টিকিট প্রদান করা হবে। তবে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে দুই দিন অবস্থান করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় লিবিয়ার বিমান টিকিট। জানানো হয় লিবিয়া হয়েই তারা ইউরোপে প্রবেশ করবেন। তবে ত্রিপলি এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে তাদের নিয়ে শুরু হয় দুই সিন্ডিকেটের গোলাগুলি।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য জানিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন এ এম এরশাদ মিয়া। কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না তিনি। একপর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা তাকে সান্ত্বনা দিলে নিজেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে আবারও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের কথা বলতে শুরু করেন। তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক ভুক্তভোগী এরশাদ খন্দকার। তাদের নির্যাতনের বর্ণনা শুনে অনেক গণমাধ্যম কর্মীদের চোখেও পানি চলে আসে। র‌্যাব ও ভুক্তভোগীরা জানায়, গত ২ আগস্ট লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) সহায়তায় দুই ভুক্তভোগী দেশে ফেরত আসেন। পরে তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। র‌্যাব-৩ এর কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে পাচারকারী সিন্ডিকেটের দুই হোতা মোশারফ হোসেন খালাসী (৫৫) ও রেজওয়ান ওভারসিসের মালিক দেলোয়ার হোসাইন জসিমকে (৫০) গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭০টি পাসপোর্ট এবং নগদ এক লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

আরেক ভুক্তভোগী এরশাদ খন্দকারের বাড়ি ডেমরা সারুলিয়ার দক্ষিণ টেংড়ায়। দালালের মধুর কথায় বিশ্বাস করে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সংসারের আয়ের উৎস নিজের দোকানটিও বিক্রি করে দিয়ে দালালের হাতে প্রথম তুলে দেন ৫ লাখ টাকা। এরশাদ খন্দকার জানান, লিবিয়ার ত্রিপলি বিমানবন্দরে পৌঁছালে একদল অস্ত্রধারী গ্রুপ তাদের জিম্মি করে। এসব গ্রুপের সদস্যরা বাংলাদেশি এবং লিবিয়ার নাগরিক। বিমানবন্দর থেকে বের হলে আরেক দল অস্ত্রধারী তাদের জিম্মি করার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের গুলিবিনিময়ের ফলে তিনি এবং এরশাদ মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। তাদেরকে ত্রিপলি মেতিকার আবু সেলিম মুসলিম হাসপাতাল ও মেতিকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় গত ২ আগস্ট দেশে ফেরেন তারা। এ সময় তাদের পরিবারের সদস্যরা দেশে অবস্থানরত দালাল মোশাররফকে জানালে সে উল্টো তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো যোগাযোগ না করার হুমকি দেয়। এরশাদ বলেন, তার নিজের কাছে থাকা টাকা এবং দেশ থেকে পাঠানো টাকায় তাদের চিকিৎসা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আরও অনেক বাংলাদেশি এখনো ওই হাসপাতালে এবং দালালদের কাছে জিম্মি রয়েছে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখে দালাল চক্রের সদস্যরা। র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাচারকারী চক্রের সদস্য। এরা সাধারণ মানুষকে ভুলিয়েভালিয়ে প্রতারিত করে আসছে। যুদ্ধাবস্থার কারণে লিবিয়ায় লোক পাঠানো নিষিদ্ধ হলেও এসব চক্রের সদস্যরা বিএমইটি (জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো) কার্ড তৈরি করে লোক পাঠাচ্ছে। সত্যিই এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। দালাল মোশাররফ দীর্ঘদিন ধরেই মানব পাচার করে আসছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অভিযোগ স্বীকারও করেছে।

সর্বশেষ খবর