বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘরে ঢুকে মা-ছেলেকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘরে ঢুকে মা-ছেলেকে হত্যা

শামসুন্নাহার - শাওন

রাজধানীর কাকরাইলে এক মা ও তার ছেলেকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে শাওন (১৮)। গতকাল সন্ধ্যায় কাকরাইল ভিআইপি রোডের ৭৯/১ নম্বর মায়াকানন ভবনের পঞ্চম তলায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনাস্থল রাজমণি সিনেমা হলের পশ্চিম দিকে তমা সেন্টারের পাশের গলির ৭৯/১ নম্বর মায়াকানন। নিহতরা এর পাশের করিম টাওয়ারের মালিক আবদুল করিমের স্ত্রী শামসুন্নাহার ও তার ছোট ছেলে শাওন। জানা গেছে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ও লেভেলের ছাত্র ছিল শাওন। বাড়ির মালিক ব্যবসায়ী করিম তখন ঘরে ছিলেন না। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহকর্তা আবদুল করিম, গৃহকর্মী রাশিদা ও বাড়ির দারোয়ান নোমানকে আটক করেছে পুলিশ। ওই বাসার গৃহকর্মী রাশিদা জানান, মাগরিবের আজানের সময় তিনি ওই বাসায় কাজে আসেন। কড়া নাড়তেই খালাম্মা (শামসুন্নাহার) দরজা খুলে দেন। রাশিদা সোজা চলে যান রান্নাঘরে। তিনি বেসিনে হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করছিলেন। হঠাৎ কেউ একজন এসে বাইরে থেকে রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পর খালাম্মার ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার শুনতে পান। সর্বশেষ ‘ওরে মা’ বলে একটি চিৎকার শুনতে পান। পরে দারোয়ান নোমান এসে রান্নাঘরের দরজা খুলে দিলে তিনি সেখান থেকে বের হন। দারোয়ান নোমান জানান, তিনি সন্ধ্যার দিকে চেঁচামেচির শব্দ শুনে দ্রুত ওপরে উঠছিলেন। এ সময় এক লোক নিচে নামছিল আর বলছিল ওপরে ঝামেলা চলছে। তিনি ওপরে উঠে গলা কাটা লাশ দেখে চিৎকার করতে থাকেন।

ওই বাড়ির নিচতলায় গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসায়ী স্বপন জানান, তিনি হাউমাউ শব্দ শুনতে পেয়ে দ্রুত ওপরে ওঠেন। সিঁড়িতে দেখেন শাওনের গলা কাটা লাশ এবং বাসার ভিতরে গিয়ে দেখেন শামসুন্নাহারের গলা কাটা লাশ পড়ে আছে। রমনা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মায়াকানন ভবনের সিঁড়িতে শাওনের এবং বেডরুমে শামসুন্নাহারের লাশ পড়ে ছিল। শামসুন্নাহারের পাশেই একটি জায়নামাজ বিছানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নামাজরত অবস্থায় শামসুন্নাহারকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আবদুল করিম পুরান ঢাকার শ্যামপুরে নিত্যপণ্যের আমদানিকারক ব্যবসায়ী। মায়াকানন, করিম টাওয়ারসহ একাধিক বাড়ি এবং নয়া পল্টনের পলওয়েল মার্কেটে দোকান, গ্রোসারি ব্যবসাসহ একাধিক ব্যবসা রয়েছে তার। কাকরাইল রাজমণি সিনেমা হলের সঙ্গে তার একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে। ছয় মাস আগে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার পর্দানশিন ছিলেন। কাউকে তিনি চেহারা দেখাতেন না। শামসুন্নাহারের তিন ছেলে। শাওন সবার ছোট। বড় ছেলে মিশু কানাডা এবং মেজ ছেলে অনীক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা জানতে পেরেছি আবদুল করিমের দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাই প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের বাসায় মাঝেমধ্যে আসতেন। কিছু দিন আগে দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাই নিহত শামসুন্নাহারকে হুমকি দিয়ে গেছেন। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, ‘নিহত দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শাওনের মাথার কাছে একটি ছুরি পড়ে ছিল। ঘর থেকে কিছু খোয়া গেছে বলে আমরা এখনো জানতে পারিনি। এটা ডাকাতির ঘটনা নয় বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ওই বাড়িতে পুলিশ আসে। ছুটে আসে র‌্যাবও। এরপর মায়াকাননের নিচের সিঁড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন। প্রবেশ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটও। ওই বাড়ি ঘিরে উত্সুক মানুষের ভিড় ছিল।

সর্বশেষ খবর