শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব সিনেটে

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাচ্ছেন মিয়ানমারে, পরিস্থিতি জটিল হবে বললেন সু চির মুখপাত্র

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারের ওপর এখনই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগ না নিলেও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক দলের সিনিয়র আইনপ্রণেতারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তারা মার্কিন সিনেটে এ বিষয়ে একটি বিল উত্থাপন করেছেন। এমন সময় এ বিষয়ে তারা কথা বলেছেন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রায় ১০ দিনের এশিয়া সফর শুরু করেছেন। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন ১৫ নভেম্বর। অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে জটিল করবে।

জানা যায়, মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটির চেয়ারম্যান, রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন এবং ডেমোক্রেট সিনেটর বেন কার্ডিন বিলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে কথা বলেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর অব্যাহত নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তারা। উত্থাপিত এই বিলে সেনাবাহিনীর সিনিয়র সদস্যের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগে অন্তত ৪৩ মার্কিন আইনপ্রণেতা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে। সে অনুযায়ী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সামরিক কর্মকাণ্ডে যেসব কর্মকর্তা ও ইউনিট জড়িত তাদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান করতে না পারেন সে জন্য ইতিমধ্যে প্রদত্ত আমন্ত্রণ বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে আলোচনা শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের অংশ হিসেবে এই বিল উত্থাপন করেছে সিনেট। এদিকে এই প্রথম ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়ার দেশগুলো সফরে বেরিয়েছেন। যাবেন চীনেও। এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির এ দেশটির সঙ্গে তার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ১৫ নভেম্বর মিয়ানমার সফর করবেন। রাখাইনে সামরিক অভিযানের মুখে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সংকটের মধ্যেই মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন টিলারসন। এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফরের অংশ হিসেবে তিনি নেপিদো যাবেন। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৫ নভেম্বর ফিলিপিনস থেকে মিয়ানমারের নেপিদো পৌঁছবেন টিলারসন। সেখানে তিনি রাখাইনে সৃষ্ট সংকটের সমাধানে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। টিলারসন মিয়ানমারের গণতন্ত্রে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করবেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি জটিল করবে বলল মিয়ানমার : যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর অবরোধ আরোপ করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির নেতা অং সান সু চির মুখপাত্র। শুক্রবার সু চির মুখপাত্র জ তাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা বলেছেন। সু চির মুখপাত্র বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ভ্রমণ ও ব্যবসা বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া আরও অনেক খারাপ পরিণতি রয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, ১৫ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমার সফর করবেন। ওই সময় তার কাছে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের প্রচেষ্টার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘তিনি যখন এখানে আসবেন তখন আমরা কী করছি তার ব্যাখ্যা তাকে দেওয়া হবে। এটা করবেন না সেটা আমরা তাকে বলতে পারি না। আর আমরা জানি না মার্কিন নীতি কী। সাবেক সেনা কর্মকর্তা জ তাইয়ের দাবি বেসামরিক সরকারের এখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে অনেক কাজ করার রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার একা দেশের পুনর্গঠন করতে পারবে না। সেনাবাহিনীকে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করতে হবে সে বিষয়টি পরিষ্কার। ২০০৮ সালের সংবিধানের আওতায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তার আওতায় সবকিছু পরিচালিত করতে হবে। সু চির এই মুখপাত্র বলেন, ‘অবরোধ ও চাপ সরকারের কাজে প্রভাব ফেলবে। আগের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, তারা যদি অবরোধ আরোপ করে তাহলে এটি কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।’

সর্বশেষ খবর