শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সামাজিক অবক্ষয়ে সর্বনাশ

সম্পদে ভাগ বসাতে মা-ছেলে খুন

আলী আজম

পারিবারিক বিরোধ ও সম্পদের ভাগ নিয়েই রাজধানীর কাকরাইলে মা ও ছেলেকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে পারিবারিক বিরোধের এসব বিষয়। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অঢেল সম্পদের মালিক নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিম। তার বেপরোয়া জীবনযাপনে বাধা দিতেন নিহত শামসুন্নাহার। করিম একাধিক বিয়েও করেন। তার এই সম্পদে ভাগ বসাতে মা-ছেলেকে খুন করা হতে পারে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কোনো ঘটনা জড়িত রয়েছে কিনা— তা তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে হত্যার ঘটনায় আবদুল করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তাকে রিমান্ডে  নিয়েছে পুলিশ। গতকাল তাদের ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলী হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলম প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই দিন রমনা থানা থেকে মামলাটির এজাহার আদালতে আসে। ঢাকা মহানগর হাকিম এজাহারটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাকরাইলের ভিআইপি রোডের ৭৯/এ নম্বর মায়াকানন বাড়িতে মা শামসুন্নাহার ও ছেলে শাওনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২ নভেম্বর নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। এতে নিহতের স্বামী আবদুল করিম, করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তা ও মুক্তার ভাই আল আমিন জনিসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়। করিম ও মুক্তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনা হলেও এখনো অধরা রয়েছেন মুক্তার ভাই জনি। নিহতের স্বামী করিমের আড়ত ব্যবসা এবং শাওন কথাচিত্র নামে একটি ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, গতকাল আবদুল করিম ও তার আরেক স্ত্রী শারমিন মুক্তার ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। মা-ছেলে খুনের সঙ্গে করিম ও মুক্তা জড়িত থাকতে পারে। মুক্তার ভাই আল আমিন জনিও এই হত্যা মামলার আসামি। তাকে গ্রেফতার করা গেলে খুনের রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক বিরোধে এই খুন। এ ছাড়া নিহত শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী মামলায় পারিবারিক বিরোধে মা-ছেলে খুন হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী করিমের প্রথম স্ত্রী মুন্সীগঞ্জের শামসুন্নাহার। ওই দম্পতির তিন সন্তান ছিল। এর মধ্যে ছোট ছেলে শাওন খুন হয়েছেন। খুন হয়েছেন শামসুন্নাহারও। এ ছাড়া শামসুন্নাহারের বড় দুই ছেলে বিদেশে থাকেন। করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদা। তাদের ঘরে এক সন্তান রয়েছে। তবে তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর করিম চার বছর আগে অভিনয় শিল্পী মুক্তাকে বিয়ে করেন। মা-ছেলের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, মা-ছেলে ছুরিকাঘাতেই নিহত হয়েছেন। দুজনের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে মায়ের চেয়ে ছেলের শরীরে বেশি জখম রয়েছে। মায়ের বুকের ওপরে একটি ছুরির আঘাত ছিল, যা ফুসফুসে আঘাত হেনেছে। আর ছেলের বুকের দুইপাশেই ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। দুটি আঘাতই ফুসফুস ভেদ করে গেছে। এরকম একটি আঘাতে যে কারও মৃত্যু হতে পারে। নিহত শামসুন্নাহারের এক স্বজন জসিম উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে মা ও ছেলের লাশ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। নিহত শামসুন্নাহারের বড় দুই ছেলে মুন্না লন্ডনে এবং অনীক কানাডায় রয়েছেন। তারা দেশে ফেরার পর লাশ দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর