শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কান্না চেপে বললেন স্মৃতির বিলুপ্তি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কান্না চেপে বললেন স্মৃতির বিলুপ্তি নেই

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বরিশাল নগরীর এখানে-ওখানে ঘুরেছেন আর শৈশবের স্মৃতিতে আবেগাপ্লুত হয়েছেন। এক সময় যেখানে তার পৈতৃক বাড়ি ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ হয়। কেমন লাগছে? জবাবে তিনি বলেন, বহুদিন পর জন্মভূমির মাটিতে পা রাখা,  সেই মাটি ছুঁয়ে দেখা এতে যে কী আনন্দ তা তো ভাষায় প্রকাশ করার নয়। এই অনুভূতি নিজের কাছে থাকাই ভালো। অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে রেখে তিনি বলেন, ‘স্মৃতির তো কোনো বিলুপ্তি নেই’। ডগলাস বোর্ডিং থেকে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় গেলেন বিএম কলেজ সংলগ্ন তার পৈতৃক বাড়ির সামনে। সেখানে তিনি খুঁজে ফেরেন তার শিশুকালের স্মৃতি। ওখানে পৌঁছামাত্র কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে তাকে ও তার স্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আইনজীবী। পিতামহ সতীশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন আইনজীবী। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের পরিবার কলকাতায় চলে যায়। সেখানে তারা অনেক সংকট উত্তরণের পর থিতু হন। বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জন্মভূমিতে একবার যাব। বহুদিন ধরে এই আশাটি বুকে ধরে রেখেছি। আমার পরিবারের কেউই এর আগে এখানে আসেননি। এবার সুযোগ হতেই চলে এলাম।’ গতকাল সকালে তিনি গিয়েছিলেন বগুড়া রোডের ডগলাস বোর্ডিং অর্থাৎ সেন্ট এ্যানস্ মেডিকেল সেন্টার দেখতে। ১৯৪৫ সালের ৩০ আগস্ট এই মেডিকেল সেন্টারে তার জন্ম। আজও সেই রেজিস্টার এখানে সংরক্ষিত আছে, যে রেজিস্টারে লেখা তার মায়ের নাম। বার বার তিনি মায়ের নামটি পড়ছিলেন আর স্মৃতিভারে কাতর হয়ে নিজের চোখের পানি সংবরণ করছিলেন। তখনকার বরিশাল আর আজকের বরিশালের মধ্যে কী পার্থক্য দেখলেন? জবাবে তিনি বলেন, তখনকার বরিশাল এত উন্নত ছিল না। তখন রাস্তাঘাটও এখনকার মতো ছিমছাম ছিল না। শহরে একটা গ্রাম্য পরিবেশ ছিল। সেকালে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার কারণে ডগলাস বোর্ডিংয়ের সুনাম ছিল। পৈতৃক বাড়ি এলাকা দেখার পর তিনি গৌরনদীর মাহিলাড়া মঠ, আগৈলঝাড়ার গৈলায় মনসা মঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির দেখতে যান। বিকালে দেখেছেন বরিশালে মহাশ্মশান ও চারণ কবি মুকুন্দ দাশ প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দির। আজ শনিবার সকালে সার্কিট হাউসে বরিশালের সুধীজনদের সঙ্গে তার মতবিনিময়ে মিলিত হওয়ার কথা। এর আগে তার সঙ্গে দেখা করবেন বরিশাল সিটি মেয়র। বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় দুপুরে ঢাকায় ফিরে যাবেন। তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেই বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটা দুই দেশের সরকারের ব্যাপার। এর বেশি কোনো কিছু তিনি বললেন না। কারণ পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, তিস্তার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তা-ই হবে। এখানে তার নিজের মতামতের জায়গা নেই। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন বৃহস্পতিবার। ৫ নভেম্বর ঢাকায় এই সম্মেলন শুরু হবে। ঢাকা থেকে আকাশপথে রওনা দিয়ে বৃহস্পতিবারই তিনি সস্ত্রীক বরিশাল নগরীতে চলে আসেন। গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী নন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় হাইকমিশনের মিডিয়া অ্যাটাশে রঞ্জন মণ্ডল, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর