সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী ৬৬

খুনি ছিল ছদ্মবেশে

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনি ছিল ছদ্মবেশে

আবুল কাশেম তার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। অনেক রাত হওয়ায় তার বড় ভাই জাকির হোসেন বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নেন। কিন্তু কাশেম রাতে ফেরেননি। বড় ভাইও তার কোনো খোঁজ পাননি। জাকির হোসেন ছোট ভাইকে না পেয়ে অনেক রাতে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে তার ঘুম ভাঙে। জানতে পারেন বাড়ির কাছের একটি পশু হাসপাতালের বাগানে একটি লাশ পড়ে আছে। অজানা আশঙ্কায় তার বুক কেঁপে ওঠে। তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পশু হাসপাতালের বাগানের সামনে তখন অনেক মানুষ। ভিড় ঠেলে তিনি ভিতরে ঢুকেই থমকে দাঁড়ান। লাশটি তার ভাইয়ের। আঘাতের চিহ্ন রয়েছে শরীরে। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। থানায় এ নিয়ে মামলা করেন জাকির হোসেন। ছোট ভাইয়ের হত্যার ঘটনায় তিনি ছয়জনকে আসামিও করেন। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না। পারে না হত্যার রহস্য উদঘাটন করতেও। হত্যা মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু জাকির হোসেন তার ভাইয়ের হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্থানে ধরনা দেন। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গোয়েন্দারা নতুন করে মামলার তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে সাড়ে পাঁচ মাস। আসামিরা কেউ গ্রেফতার হলো না। এক সকালে ধানখেতে মিলল জাকির হোসেনের লাশ। ছোট ভাই খুনের মামলার বাদী জাকির হোসেনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ফেলে রাখা হয় ধানখেতে। সাড়ে পাঁচ মাসের ব্যবধানে দুই ভাই খুনের পর গোটা এলাকায় আতঙ্ক। ঘটনাটি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাইঘর গ্রামের। ভাইয়ের খুনিদের গ্রেফতারের দাবি করায় বড় ভাই নিজেই খুনের শিকার হলেন।

২০১৪ সালের ৩ জুন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের পশু হাসপাতালের পেছনের বাগানে ওই উপজেলার নাইঘর গ্রামের আবুল কাশেমকে (৩৫) খুন করে লাশ ফেলে রাখা হয়। এ মামলার বাদী ছিলেন নিহতের বড় ভাই জাকির হোসেন। কিন্তু ছোট ভাইকে হত্যার প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে ঘাতকরা তাকেও খুন করে। একই বছরের ১৮ নভেম্বর সকালে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাইঘর নোয়াপাড়া ধানের জমির সেচনালা থেকে জাকির হোসেনের (৪০) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাদী খুন হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। গোয়েন্দারা নড়েচড়ে বসে। খুনিদের গ্রেফতারে তারা নানা তৎপরতা শুরু করে। জাকির হোসেন হত্যাকাণ্ডে থানায় মামলা করেন তার স্ত্রী ফারজানা। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবুল কাশেম খুনের রহস্য উদঘাটনে চারদিকে সোর্স নিয়োগ করে গোয়েন্দারা। তাদের কাছে খবর আসে, কুমিল্লার কবির হোসেন যিনি কাশেম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি, তাকে সিলেটে দেখা গেছে। কখনো রিকশাচালক, কখনো দিনমজুর হিসেবে ছদ্মবেশ নিতে দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দারা একই বছর ২৯ ডিসেম্বর সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার হাজীপুর এলাকা থেকে কবির আহাম্মদকে গ্রেফতার করে। তাকে ব্যাপক জেরা করা হলে বেরিয়ে আসে দুই সহোদর হত্যা মামলার রহস্য। জেরার মুখে কবির জানান, বন্ধু আবুল কাশেম তার কাছে দুই লাখ টাকা পেত। এ টাকার জন্য তাকে খুব তাগাদা দিচ্ছিল। ৩ জুন গভীর রাতে আড্ডা দেওয়ার কথা বলে আবুল কাশেমকে বাসার বাইরে নিয়ে আসা হয়। তার বন্ধুরা মিলে তাকে নিয়ে যায় উপজেলা সদরের পশু হাসপাতালের পাশের বাগানে। সেখানে নিয়ে নেশাজাতীয় কোমলপানীয় পান করানো হয় আবুল কাশেমকে। একপর্যায়ে ছয়জন মিলে কাশেমকে খুন করি। পরে পালিয়ে যাই সিলেটে। সিলেটে গিয়ে নিকটাত্মীয়দের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে দিনমজুরের কাজ করে ছদ্মবেশ নিয়ে থাকত সে। পরে তারই পরিকল্পনায় খুন করা হয় মামলার বাদী জাকির হোসেনকে। ওই ঘটনায় অংশ নেয় চার ঘাতক। কবির আহাম্মদ ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের মৃত আলী মিয়ার ছেলে। এর আগে পুলিশ কাশেম হত্যা মামলায় সবুজ নামে একজনকে আটক করেছিল। এরই মধ্যে পুলিশ গ্রেফতারকৃত কবির ও সবুজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই দুই খুনের সঙ্গে জড়িত সব আসামির নামের তালিকা পায়। এ বিষয়ে আবুল কাশেম হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কাশেম হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তার ভাই জাকির হত্যা মামলার রহস্যও উদঘাটিত হলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর