মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

টমাস এ শ্যানন

‘বাংলাদেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যাতে দেশের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’ গতকাল সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনাকালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস              এ শ্যানন যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। রবিবার সকালে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে কর্মব্যস্ত সময় কাটানো মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি গতকাল দুপুরেই কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্টের ষষ্ঠ অংশীদারিত্ব সংলাপে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাদা কথা বলেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। সফরের শেষ দিনে বেলা পৌনে ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নাওয়ের্ট, রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে শ্যানন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে থাকা বিএনপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বৈঠক করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধি দল সরকারের পাশাপাশি আমাদের সঙ্গেও বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে, কিন্তু তা বলা যাবে না।’ বৈঠকের পর শ্যানন সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। বৈঠকের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, রাজনীতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে শ্যাননকে অবহিত করেছেন। পাশাপাশি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও তিনি শ্যাননের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলাসহ গুম, খুন, জেল-জুলুম, হয়রানি-নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো থেকে শুরু করে দেশের বিচার বিভাগের বিদ্যমান অবস্থা ও সরকারের ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে। তা ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটসহ যাবতীয় অবস্থা, বিশেষ করে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণে যাওয়া ও আসার পথে তার গাড়িবহরে কীভাবে নৃশংস হামলা করা হয়েছে— তারও বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। বৈঠকের নির্ভরযোগ্য সূত্রটি আরও জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর পরও সরকারের প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচনের জন্য সব দলের ক্ষেত্রে ‘লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড’ তৈরি দূরের কথা, সরকারি দল ছাড়া অন্য কোনো বিরোধী দল, বিশেষ করে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে কোথাও কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না।

তা ছাড়া বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা ‘রাজনৈতিক’ মামলাগুলোর দ্রুত রায় প্রদানের মাধ্যমে দলের সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এসব ছাড়াও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ ও সহায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করে বিএনপি। এসব কিছু মনোযোগসহকারে শোনেন মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি শ্যানন। তবে সহায়ক সরকারসহ বেশির ভাগ বিষয়েই তিনি কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানা যায়।

সর্বশেষ খবর