রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
আই ক্ল্যাডসের সেমিনার

৭ মার্চের ভাষণ অধিকারহারা মানুষের অনুপ্রেরণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ মার্চের ভাষণ অধিকারহারা মানুষের অনুপ্রেরণা

রাজধানীতে গতকাল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ; গণতান্ত্রিক সংগ্রাম-মানবিক মর্যাদা-স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একই সঙ্গে ইতিহাসের সৃষ্টি ও স্রষ্টা। ৭ মার্চ ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই ভাষণটি ইতিহাসের একটি দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত।  ভাষণটি দেশের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী অধিকারহারা মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে। আর ভাষণটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচিতে এটি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আই ক্ল্যাডস) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : গণতান্ত্রিক সংগ্রাম-মানবিক মর্যাদা-স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মো. ফরাসউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই ভাষণকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে দেখি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা তার সাহস ও নির্ভীকতার জন্য শ্রদ্ধা করি। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক কবিতা, যার কোনো মানচিত্র নেই।’

পল্লী কর্মী সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে মুক্তি বলতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মুক্তির কথাই বলেছেন। একজন মানুষ যেন বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনভাবে এগিয়ে যেতে পারেন সে কথাই ছিল তার ভাষণে। ৭ মার্চের মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের সৃষ্টি ও স্রষ্টা। তার ৭ মার্চের ভাষণের পেছনে আছে গণজাগরণের দীর্ঘ ইতিহাস। আই ক্ল্যাডসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এটি স্বাধীনতার মূল এবং মানবিক মর্যাদার লড়াইয়ের ঘোষণাপত্রও ছিল। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি কিছু কুলাঙ্গার ছাড়া সব বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এই ভাষণটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা না যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কৌশলে তিনি তার ভাষণে বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। আর বাংলা একাডেমি ২০০৪ সাল থেকেই এ বিষয়ে কাজ শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের জন্য দেওয়া ইউনেস্কোর এই সম্মান অর্জনে দেশের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলা একাডেমিও যুক্ত ছিল।’ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ইতিহাস, অনুভূতি, যুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে দিকনির্দেশনা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এই ভাষণ নিঃসন্দেহে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছিল। মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম, বীরবিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনতে সেদিন  লাখ লাখ মানুষ সমাগত হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এত মানুষ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই ভাষণের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে সে সময় একটি বার্তা পৌঁছেছিল যে, বঙ্গবন্ধু কৌশলে হলেও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ৭ মার্চের ভাষণটির আন্তর্জাতিকীকরণ আগেও করা হয়েছিল। ইউনেস্কোর এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এবার ভাষণটির আরও প্রসার ঘটল। ভাষণটি ইতিহাসের একটি দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার পর ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে। ২১ বছর দেশের সরকারি গণমাধ্যমে এই ভাষণটি নিষিদ্ধ ছিল। এর প্রচারে কারা সে সময় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা বের করতে হবে। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে, তারাই এই ভাষণ প্রচারে বাধা দেয়। এই ভাষণ দেশের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী অধিকারহারা মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে। শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি পড়াতে হলে শিক্ষার্থীদের ২৩ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস পড়াতে হয়। তবে ভাষণটি শুধু নিচের ক্লাসে পড়ালেই হবে না, স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এটি পড়াতে হবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য দুটো বাস সংগ্রহ করেছি। সেখানে স্মার্ট টিভির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেখানো হয়। এর মাধ্যমে ছাত্ররাও উজ্জীবিত হচ্ছে।’ বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আই ক্ল্যাডসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওয়াহিদুজ্জামান চান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দীন আহমেদ, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ইসলামী জোটের সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হাসান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর