রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আজ বিএনপির গণসমাবেশ

বিশেষ বার্তা দেবেন খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় চার বছর পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘গণসমাবেশ’-এ আজ বক্তব্য দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানায়, এই গণসমাবেশ থেকে গণতন্ত্র, আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন সম্পর্কে ‘বিশেষ বার্তা’ দেবেন বেগম খালেদা জিয়া। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপ-সমঝোতার ডাকও দিতে পারেন তিনি। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারেন বিএনপি-প্রধান। ইতিমধ্যে ২৩টি শর্তে জনসভা করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। আজ বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু এই গণসমাবেশ। সমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি। এরই মধ্যে ৩০ ফুট বাই ৬০ ফুট মঞ্চও তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি ছাড়াও অঙ্গসংগঠন ও আশপাশের জেলা নেতাদের সঙ্গেও প্রস্তুতি সভা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকায় খালেদা জিয়ার সর্বশেষ জনসভা হয়েছিল গত ৫ জানুয়ারি, নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে। আর সোহরাওয়ার্দীতে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ সমাবেশ হয় ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ঢাকা মহানগর পুলিশের সম্মতিপত্র পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান। এর আগে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ডিএমপি কার্যালয়ে গেলে তাদের কাছে ২৩ দফা শর্তের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আতাউর রহমান ঢালী, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, হারুনুর রশীদ, ফজলুল হক মিলন, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিমসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গণসমাবেশের সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গণসমাবেশের ব্যাপারে ডিএমপির একটি সম্মতিপত্র আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। ২৩টি শর্ত দিয়ে তারা আমাদের এই জনসভা করতে সম্মতি প্রদান করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই কর্মসূচি সফল করতে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি।’ সম্মতি প্রদান করায় ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে সমাবেশ সফল করতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি সরকারি দল ও ডিএমপিকে অনুরোধ জানাতে চাই, এই জনসভা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করার জন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করি, আপনারা সহযোগিতা করবেন। গণসমাবেশে বাধা দিয়ে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে তার বিঘ্ন ঘটাবেন না। আপনারাই উসকানি দিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি করবেন না। কারণ ইতিমধ্যে কয়েক দিনে যেসব ঘটনা আপনারা ঘটিয়েছেন সেগুলো কিন্তু একটা ভিন্ন অর্থ বহন করে। এ পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতারসহ পুলিশি তাণ্ডব চলছে।’ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, চরম উসকানির মধ্যেও আপনারা ধৈর্য ধারণ করে এই গণসমাবেশ সফল করার ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।’ গণসমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের মধ্য দিয়ে ‘জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে’ বলে আশা করছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ঢাকা মহানগরীর সব থানা-ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে শুক্রবার রাতে শাহজাহানপুরে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসা থেকে জনসভা উপলক্ষে প্রস্তুতি বৈঠকের পর নেতা-কর্মীরা বাসায় ফেরার পথে ২০ জনকে গ্রেফতারের কথাও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

জনসভার শর্তে যা আছে : বিকাল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে। ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসে’ এমন কোনো ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, ব্যক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। লাঠিসোঁটা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা যাবে না। উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী বা জননিরাপত্তাবিরোধী কাযর্কলাপ করা যাবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-সংলগ্ন স্থানে অনুষ্ঠানের যাবতীয় কাযর্ক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগে উদ্যান বা তার আশপাশের রাস্তা-ফুটপাথে সমবেত হওয়া যাবে না। যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, এমন কিছু করা যাবে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে রেজুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে না। গণসমাবেশে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের আভাস দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুধু জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনই এই গণসমাবেশের মূল লক্ষ্য নয়। সেই সঙ্গে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য চলমান যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন সুসংহত করার ক্ষেত্রে, জনগণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যে মেসেজ বা বার্তা দেবেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সমগ্র দেশের সচেতন মানুষ মনে করে। আমরা মনে করি, এই গণসমাবেশ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে জাতি যে বক্তব্য পাবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ হবে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, “বিএনপি যেহেতু সব সমাবেশে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করে সেহেতু তাদের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়।” আমি বলি, তার এ বক্তব্য সর্বৈব ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। বিএনপির এ ধরনের সমাবেশে কোনো বিশৃঙ্খলা বা এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। দুঃখজনকভাবে প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে পাচ্ছি, তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল হচ্ছে, গোলমাল হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে এমনকি একে অন্যকে হত্যা পর্যন্ত করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করব, অনুগ্রহপূর্বক এ ধরনের ভিত্তিহীন, মিথ্যা তথ্য না দিয়ে এবং একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আমরা যে চেষ্টা করছি, সেই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে ইতিবাচক কথা বলুন। প্রতিটি বক্তব্যের মধ্যে নেতিবাচক কথা বলে, উসকানিমূলক কথা বলে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অনুগ্রহ করে ব্যাহত করবেন না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর