মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাজনীতিতে নতুন মোড়

কর্মসূচিতে বাধা নয়, রাজনৈতিক মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

কর্মসূচিতে বাধা নয়, রাজনৈতিক মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ

সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ‘শান্তিপূর্ণ’ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে তাতে কোনো বাধা দেবে না দলটি। রাজনৈতিকভাবেই বিরোধী দলকে মোকাবিলা করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়। দলীয়  নেতারা জানান, বিএনপির অভিযোগ আছে, সরকার তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার হরণ করছে। সেই অভিযোগ খণ্ডন করতে এবার বিএনপিকে মাঠের কর্মসূচিতে চায় আওয়ামী লীগ। কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, অতীত ইতিহাস বলে বিএনপির রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ মানেই সন্ত্রাস-বিশৃঙ্খলা, নিজেদের মধ্যে মারামারি। সে কারণে আগামী কয়েক মাস ‘রাজনৈতিক সুযোগ’ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে বিএনপির কার্যক্রম। এই সুযোগ সৃষ্টি করে সরকার দেশি-বিদেশি শক্তিকে বোঝাতে চায় দেশে সব রাজনৈতিক দল দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আর বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অতীতের মতো সন্ত্রাস-তাণ্ডব চালালে জনগণও তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামীতে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করলে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। রবিবারও আমরা বাধা দিইনি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নালিশ করেছিলেন। কিন্তু সুষমা স্বরাজ জবাবে বলে দিয়েছেন, আমাদের দেশেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ গত রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। ‘দলীয় সরকার তো নয়ই, শেখ হাসিনার অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হবেই না। নতুন নির্বাচন কমিশনকে বলব, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের এই বক্তব্য সংবিধানবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি যতই এ নিয়ে হৈচৈ করুক না কেন, আগামী নির্বাচন এই কমিশনের অধীনেই হবে এবং বর্তমান সরকারই সহায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আগামী নির্বাচনের আগে সংবিধানে হাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীর বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার ব্যক্তি আক্রোশ, বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য। বিএনপি যে সংবিধান, আইনের শাসন মানে না-সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’  আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আমরা চাই বিএনপি মাঠে থাকুক। তবে মাঠে থেকে বিশৃঙ্খলা করলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। কারণ বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ঢালাও একটি অভিযোগ করে আসছে, তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবতায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় তারা সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন হারিয়েছে। সে কারণে তারা কর্মসূচি পালন করতে পারে না। আমরা যে তাদের বাধা দিচ্ছি না, বরং সুযোগ করে দিচ্ছি, সেটা জনগণ দেখুক, বুঝুক। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা এখন আওয়ামী লীগে কর্মী-সমর্থক বাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সদস্য সংগ্রহ, জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা করছেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন। এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হচ্ছে। তুলে ধরা হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ভোটারদের কাছে টানতে আগামীতে সরকারের পরিকল্পনাগুলোও সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বিএনপিকে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমরা চাই গণতন্ত্রের বিকাশ চর্চা হোক আমাদের দেশে। এই হিসেবে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি রাজনৈতিক ধারায় থাকুক। তবে আমরা রাজনীতিকে বিশ্বাস করি, অপরাজনীতিকে নয়।

সর্বশেষ খবর