মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মন্ত্রী-সচিব লড়াইয়ে বন্ধ জনশক্তি রপ্তানি

শুধু মালয়েশিয়াগামী বৈধ ১২ হাজার কর্মীর ফাইলই সচিবের লাল ফিতায় বন্দী, কাতার-সৌদি যাওয়া শ্রমিকরাও ভোগান্তিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মন্ত্রী-সচিব লড়াইয়ে বন্ধ জনশক্তি রপ্তানি

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী ও সচিবের দ্বন্দ্বে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে জনশক্তি রপ্তানি। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের সহায়তাই যে মন্ত্রণালয়ের কাজ, সেই মন্ত্রণালয়ই এখন শ্রমবাজার বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানান অজুহাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করে আটকে দেওয়া হচ্ছে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ফাইল। লাল ফিতার এই দৌরাত্ম্য এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে যে, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও মন্ত্রণালয়ের বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়াগামী ১২ হাজার কর্মী পড়েছেন ঘোর অনিশ্চয়তায়।

সব যাচাই-বাছাই শেষে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়ন থাকলেও মন্ত্রণালয় দিচ্ছে না ছাড়পত্র। ফলে শুধু মন্ত্রণালয়ের খামখেয়ালিপনায় মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না ১২ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক। মন্ত্রণালয়ের এই বিরূপ আচরণে আটকে গেছে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াও। অনিশ্চয়তা দেখা গেছে পুরো জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতেই। হতাশ মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারাও। এ পরিস্থিতি শুধু মালয়েশিয়াগামীদের ক্ষেত্রেই নয়, কাতার ও সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও একই ধরনের গাফিলতি দেখাচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। জনশক্তি রপ্তানিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে যে ৭২ হাজার কর্মী ডিমান্ড নোট ও ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তাদের যাওয়াও আটকে যেতে পারে। এমনকি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে মালয়েশিয়া। ফলে যে বিশালসংখ্যক কর্মীর মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছিল তা থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ। বায়রার নেতারা বলছেন, জনশক্তি বাজারের চরম প্রতিকূলতার মাঝে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও কাতারের শ্রমবাজারই যেখানে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে সেখানে এমন উদাসীনতার চরম মূল্য দিতে হতে পারে। পরিস্থিতির উত্তরণে ইতিমধ্যেই প্রবাসীকল্যাণ সচিবের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বায়রার নেতারা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। জানা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সরকারের নানান কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আবার চালু হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এমনকি বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি করে দেশটি। শ্রমিকদের প্রতারণা ঠেকাতে এবং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে জি টু জি প্লাস পদ্ধতির প্রয়োগ করে। ইতিমধ্যেই মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ডিমান্ড লেটার মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। প্রতিটি ডিমান্ড লেটারের বিষয়ে নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন দেখে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সত্যায়ন করে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যে ৫০ হাজার কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়। যাদের একজনও কোনো ধরনের প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে হাইকমিশনে যাননি। এখন প্রক্রিয়ায় আছেন ৭৬ হাজার। এর মধ্যে ১২ হাজার কর্মীর সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও তাদের বহির্গমন ছাড়পত্র দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়। ফলে তারা মালয়েশিয়া গিয়ে কাজে যোগ দিতে পারছেন না কিছুতেই। অন্যদিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে উপেক্ষা করে একক ভিসায় সৌদি আরব, কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদের যাওয়া ঠেকাতে নানান সার্কুলার জারি করা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে অবহিত না করেই প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার একক সিদ্ধান্তে সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সামছুল ইসলামের স্বাক্ষরের মাধ্যমে দূতাবাস ও কনস্যুলেট জেনারেল কর্তৃক ভিসায় সত্যায়ন ছাড়া বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান না করতে বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজার কাছে লিখিত সার্কুলার পাঠান। এর পর থেকেই একক ভিসার কর্মীদের ছাড়পত্র ইস্যুও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু কষ্টে জোগাড় করা এসব একক ভিসার অনেকেরই মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে জনশক্তি রপ্তানি নিম্নগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোনো সময় না দিয়ে হঠাৎ বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুর ওপর সার্কুলার জারি হওয়ায় বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো পড়েছে বিপাকে। বায়রার নেতারা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে একক ভিসার কর্মীরা কোনো সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। অতীতে সত্যায়ন ছাড়া একক ভিসার লাখ লাখ কর্মী বিদেশে গিয়ে কোনো ধরনের বিপাকে পড়েননি। এখন সত্যায়নের দোহাই দিয়ে কর্মী প্রেরণে পদে পদে বাধার সৃষ্টি করা হলে অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর