মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দৃষ্টি এখন নেপিদোতে

সু চি বললেন, সমঝোতার তিন সপ্তাহের মধ্যে রোহিঙ্গা ফেরত কাল মিয়ানমার যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশের মন্ত্রী যাবেন ২১ নভেম্বর, আসিয়ানে গুরুত্বহীন রোহিঙ্গা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভিয়েতনামে সদ্য শেষ হওয়া এপেক সম্মেলন ও ফিলিপাইনে চলমান আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার আশা করা হলেও সে প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। তবে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি গতকাল আসিয়ান সম্মেলনের প্লেনারি অধিবেশনে রোহিঙ্গা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। অবশ্য, আসিয়ান নেতাদের যৌথ বিবৃতির খসড়ায় বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার খবর এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতেই আগামীকাল বুধবার মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। যাচ্ছেন রাখাইনে সামরিক বাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের বিষয়ে কঠোর বার্তা নিয়ে। তার এ সফর সামনে রেখে তটস্থ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও। টিলারসনের পর আসেম সম্মেলন উপলক্ষে মিয়ানমার যাচ্ছেন বিশ্বের কয়েক ডজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যাচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়েছে ২৩ নভেম্বর। ফলে পুরো বিশ্বের দৃষ্টিই এখন মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর দিকে। গতকাল আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ বিবৃতির খসড়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা রোহিঙ্গা সংকটকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি এ নিয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিও কোনো মন্তব্য করেননি এই আঞ্চলিক জোটের শীর্ষ সম্মেলনে। আজ মঙ্গলবার শেষ হবে এই সম্মেলন। গতকাল খসড়া বিবৃতির একটি অনুলিপি হাতে পাওয়ার দাবি করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, খসড়া বিবৃতিটিতে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি এবং ‘রোহিঙ্গা’ নামটিও ব্যবহার করা হয়নি। এই নামটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিদেশি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। খসড়া বিবৃতির একটি অনুচ্ছেদের শেষাংশে শুধু রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে ভিয়েতনামে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ ও ইসলামী জঙ্গিদের সঙ্গে ফিলিপাইনের সাম্প্রতিক লড়াইয়ের বিষয়টি উল্লেখের পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের ‘ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর’ কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে রোহিঙ্গা নিয়ে কোনো কথা নেই বিবৃতির খসড়ায়। আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান রদ্রিগো দুতার্তের দেশ ফিলিপাইন খসড়া বিবৃতিটি তৈরি করেছে। সম্মেলনে রাখাইন সমস্যা নিয়ে আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ফিলিপাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্তো রোমুলো। তিনি বলেন, ‘অং সান সু চি নোবেল পুরস্কারের অযোগ্য হলেও বিশ্বনেতারা এখনো তাকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখছেন। তাই হয়তো তারা রাখাইন সমস্যাটি এড়িয়ে যাচ্ছেন। আসিয়ান সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনার কোনো আলামত আমি দেখছি না।’ এদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীদের পরিকল্পিত গণধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে সংস্থার বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেল বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেল বলেন, ‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যে অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, এর জন্য অবশ্যই তাদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সভাপতি ও আইনজীবীদের কাছে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিস্তারিত তুলে ধরব।’ জাতিসংঘ সংস্থা আইওএম বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গা শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারীরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। ক্যাম্পগুলোতে শিশুদের বিপথে পরিচালনা করা ও পাচার বিষয়ে অনুসন্ধান করে এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে আইওএম বলেছে, নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে কাজ করছে রোহিঙ্গা শিশুরা। তা সত্ত্বেও তাদের প্রহারের শিকার হতে হয়। কখনো কখনো তাদের ওপর চালানো হয় যৌন নির্যাতন। এমনকি ১১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আইওএমের হিসাবে, মিয়ানমারে নৃশংসতার শিকার হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে কমপক্ষে ছয় লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখই শিশু। মোট রোহিঙ্গার শতকরা ৫৫ ভাগই তারা। এসব শিশু বসবাস করছে নাজুক আশ্রয় শিবিরে। তাদের দিকে চোখ পড়েছে অসাধু চক্রের। টার্গেট করছে লেবার এজেন্ট বা শ্রমে নিয়োজিত করানোর দালালরা। তারা এসব শিশুকে উৎসাহিত করছে। এ ক্ষেত্রে তারা বেছে নিচ্ছে শিশুদের বাবা-মাকে। দুর্ভোগে পড়ে এমনিতেই তারা বিপর্যস্ত। এর ওপর অর্থের লোভ দেখানো হয় তাদের। ফলে ওই সব বাবা-মা সহজেই সন্তানকে কাজ করার অনুমতি দেন অথবা বাধ্য করেন। ছেলেশিশুরা কাজ করছে কৃষিতে, খামারে, অবকাঠামো খাতে, মাছ ধরা বোটে, চায়ের দোকানে। আবার কখনো রিকশা চালাচ্ছে তারা।

অন্যদিকে মেয়েশিশুরা গৃহকর্মে অথবা পরিবারের সন্তানদের দেখাশোনার কাজ করছে। তারা এসব কাজ করছে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজার, চট্টগ্রামে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর