শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আরও রোহিঙ্গা শূন্যরেখায়

রাখাইনে সেনা কর্মকর্তা প্রত্যাহার

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত থেকে দুই সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে শনি ও রবিবার যাচাই-বাছাই এবং তল্লাশি শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হতে না হতেই সীমান্তের শূন্যরেখায় জড়ো হয়েছে আরও রোহিঙ্গা। রবিবার রাতে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা শূন্যরেখায় অবস্থান নিয়েছে।

যাচাই-বাছাই শেষে তাদের রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হবে কিনা— এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেননি এখানে দায়িত্বরত বিজিবি কর্মকর্তারা। তবে তাদের কাউকে শূন্যরেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি বিজিবি। ফলে রবিবার রাত থেকে গতকাল সারা দিন খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করতে হয়েছে সদ্য আসা এসব রোহিঙ্গাকে। অবশ্য এদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা দেয়নি বিজিবি। দিনভর বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও এপারে আগে আসা রোহিঙ্গা আত্মীয়স্বজনরা সীমান্তের শূন্যরেখায় গিয়ে রান্না করা ও শুকনো খাবার, পানি, ওষুধ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অন্যদিকে গতকালও টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাঁচটি ভেলায় চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২১৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু অনুপ্রবেশ করেছে বলে বিজিবি ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে। আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত পরিদর্শনকালে ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ বলেন, সীমান্তের শূন্যরেখায় আসা এসব রোহিঙ্গার কারও কাছে অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদক রয়েছে কিনা, তা যাচাই করার পর ক্যাম্পে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শূন্যরেখায় অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আগের মতো এখন রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন না দিলেও তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে ঘর থেকে বের হতে পারছে না কোনো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। পাশের বাড়িতে বা পাড়ায় কী হচ্ছে, তাও তাদের পক্ষে জানার সুযোগ হচ্ছে না। কেউ কাজ বা খাদ্যের সন্ধানেও বের হতে পারছে না। রাতে বা দিনে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপির চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ বের হয়ে ধরা পড়লে তাদের ওপর নেমে আসছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। মিয়ানমারের বুসিদং ও রাসিদং এলাকায় এখনো যারা রয়ে গেছে, তাদের এখন প্রধান সমস্যা খাদ্য। ওখানে কারও ঘরে কোনো দানা পরিমাণও খাদ্যদ্রব্য নেই বলে জানান পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

ভেলায় চড়ে আরও রোহিঙ্গা : টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় রোহিঙ্গাবোঝাই পাঁচটি ভেলা এসেছে। ভেলায় আসা এসব রোহিঙ্গাকে স্থানীয় পুলিশ ও বিজিবি উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে মানবিক সহায়তা দিয়ে বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হবে বলে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন খান। প্রসঙ্গত, গত বুধবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৫টির মতো ভেলায় চড়ে ঝুঁকি নিয়ে নাফ নদ পার হয়ে দেড় হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এসব রোহিঙ্গা শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট, দক্ষিণপাড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে।

রাখাইনের দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা প্রত্যাহার : রাখাইন রাজ্যের দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কেন তাকে প্রত্যাহার করা হলো, তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। গত আগস্ট মাসে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর ছয় লাখের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়। সেনা অভিযানের সময় হত্যা ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। খবর রয়টার্সের।

রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ায় ৩ জনের সাজা : রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে গতকাল র‌্যাব-৭ টেকনাফ পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের সাজা প্রদান করেছে।

এ সময় এসব বাড়ি থেকে ১৭১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে সরকারি ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে টেকনাফ পৌরসভায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরান পল্লানপাড়া এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। র‌্যাব জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার পর থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয় নেয়। এ রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। কিন্তু অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে ভাড়া বাসায় ওঠেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভাড়া ও আশ্রয় না দেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছিল।

তবু একশ্রেণির বাড়ির মালিক রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে। র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন জানান, রোহিঙ্গাদের কোনোভাবেই বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে ৩ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের সাজা প্রদান করা হয়েছে এবং ১৭১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর