শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে খালেদা জিয়া

ন্যায় বিচারের বদলে দেশে এখন নাই বিচারের পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ন্যায় বিচারের বদলে দেশে এখন নাই বিচারের পরিবেশ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল আদালতে যান

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া পঞ্চম দিনের বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই মিথ্যা অভিযোগ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশে ন্যায় বিচারের বদলে এখন নাই বিচারের পরিবেশ বিরাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে হেনস্তা ও জনগণের সামনে হেয় করতেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। অসত্য ও বানোয়াট এসব মামলার কোনোটিরই আইনি কোনো ভিত্তি নেই।’ এসব মামলায় নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে ট্রাস্ট দুটি গঠন করা হয়েছে এবং সঠিকভাবে সেগুলো পরিচালিতও হচ্ছে। ট্রাস্টের নামে প্রাপ্ত বিদেশি অনুদানের অর্থ ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত রয়েছে এবং সেগুলো বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে অনেক টাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এই ট্রাস্টের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতাও ছিল না।’ খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশে আরও বলেন, তাকে এসব মামলা দিয়ে যতই জর্জরিত করা হচ্ছে, তত বেশি মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। গতকাল রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া অসমাপ্ত বক্তব্যে এ দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মামলায় আনীত দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। জিয়াউর রহমানের নামে অনুদান দিয়েছিল কুয়েত।’ একই আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায়ও গতকাল হাজিরা দেন বিএনপি-প্রধান। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে রওনা দিয়ে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আদালতে পৌঁছেন তিনি। আদালতে পৌঁছার পর তাকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘ম্যাম শুরু করেন।’ বেলা ১১টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। পরে বিচারক ২৩ নভেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান শাসক দল “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে” আমার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করেছে। তার প্রধান কারণ হলো আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলে আমাকে ক্ষমতাসীনরা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অসত্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ ও অপপ্রচার চালিয়ে এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব মামলার আশ্রয় নিয়েছে সরকার। আমাকে হেনস্তা ও জনগণের সামনে হেয় করার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি, হবেও না ইনশা আল্লাহ। বরং এসব করে তারাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কারণ এ দেশের মানুষ অনেক সচেতন এবং তারা সত্য ও মিথ্যার ফারাক সহজে বুঝতে পারে। তাই যতই মামলা দিয়ে জর্জরিত করা হচ্ছে, তত বেশি মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছি আমি। জনগণ আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।’  এর আগে ৯ নভেম্বর খালেদা জিয়া চতুর্থ দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। এদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়া স্থায়ী জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেয়। পরে বিচারক গতকাল এ মামলার পরবর্তী সময়ে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছিলেন। তারও আগে ২ নভেম্বর খালেদা জিয়া দুই মামলায় স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে দেন। ফলে প্রতি সপ্তাহেই এখন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। গাড়িবহর থেকে ছাত্রদলের ১২ নেতা আটক : গতকাল আদালতে যাওয়ার সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের পেছন থেকে ছাত্রদলের ১২ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর কদম ফোয়ারা থেকে ১০ জন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে আরও দুজনকে আটক করা হয়। এর আগে বিশেষ আদালতের উদ্দেশে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে রওনা দেওয়ার পর ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী গাড়ির পেছনে পেছনে যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে।

সর্বশেষ খবর