সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভোটযুদ্ধে সরব তিন সিটি

বরিশালে প্রার্থী ঠিক হয়নি কোনো দলেই

রাহাত খান, বরিশাল

আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচন হবে। এ সম্ভাবনা সামনে রেখে নানামুখী প্রচারণায় ব্যস্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী। অপরদিকে প্রকাশ্য প্রচারণা না থাকলেও কৌশলে নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বিরোধী জোটের প্রধান বিএনপির একাধিক প্রার্থী। প্রধান দুই দল এখনো তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। এতে উভয় দলে নির্বাচনের সময় বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য ছোট দল এ নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। তবে শুধু দল নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাররা প্রার্থীর সততা, যোগ্যতা ও গুণাগুণ বিবেচনায় চূড়ান্ত রায় দেবে বলে প্রত্যাশা নাগরিক সমাজের। বরিশালে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো প্রভাব নেই। আগামী সিটি নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। তাই আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। আওয়ামী লীগের একটি অংশ চায়, মেয়র পদে প্রার্থিতার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির বড় ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহকে মনোনীত করা হোক। তবে সাদিককে একক প্রার্থী মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের আরেক অংশ। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ এবং মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। মুখে বলার জো না থাকলেও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল এবং মহানগর সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চেম্বার সভাপতি আলহাজ্ব মো. সাইদুর রহমান রিন্টুও ভিতরে ভিতরে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সবুজ সংকেত পেলে তবেই মেয়র পদে সচেষ্ট হওয়ার কথা ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন তারা।  মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট চৌধুরী দুলাল বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। অন্য কেউ মেয়র পদে আগ্রহী থাকলেও মহানগর আওয়ামী লীগের কাছে প্রকাশ করেননি। তারপরও দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড যাকে বরিশালে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবে সবাই। নিজের প্রার্থিতার প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যান অ্যাডভোকেট দুলাল। সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিটি নির্বাচন প্রত্যাশা করেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। এখানে অনেকেই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন। তবে কেন্দ্রীয় সংসদ এবং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন তাকেই মেনে নেবেন সবাই। এ ক্ষেত্রে কোনো বিদ্রোহের মুখোমুখি হতে হবে না বলে তার ধারণা। বিএনপির প্রার্থীরা প্রকাশ্যে কোনো নির্বাচনী প্রচারণা না চালালেও ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নীতিনির্ধারকরা। মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার আগামীতে বরিশালের মেয়র প্রার্থী হবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে। সরোয়ারের প্রার্থী না হওয়ার খবর দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও জানেন। এ সুযোগে সরোয়ারের পর নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করছেন ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত মেয়র আহসান হাবিব কামাল। বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার শর্তে ছেড়ে দিতে হয়েছিল দলের জেলা সভাপতির পদ। নির্বাচিত হওয়ার পর দলের কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ায় এবং দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের এড়িয়ে চলায় হারিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মত্স্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক পদ। কামাল নিজেকে সরোয়ারের পর দ্বিতীয় যোগ্য প্রার্থী মনে করলেও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিরিন বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে আজ পর্যন্ত দলের কোনো পর্যায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে দেখা যায়নি। দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের এড়িয়ে চলেছেন। ফলস্বরূপ বিএনপির পাঁচ শতাধিক সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্যও করা হয়নি তাকে (কামাল)। এমন পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তি নিজেকে বিএনপির যোগ্য প্রার্থী ভাবলে তা হাস্যকরই শুধু নয়, দলেল সঙ্গে পরিহাসের শামিল। তাই ত্যাগ-বঞ্চনা বিবেচনায় বরিশালে এবার মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পাওয়ার অন্যতম দাবিদার জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনও মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়ার কথা বলেছেন। তবে চাঁন কিংবা শিরিন মেয়র পদে দলের মনোনীত প্রার্থী হবেন— এটা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের কারণে চাইছেন না বরিশাল বিএনপির একচ্ছত্র অধিপতি সরোয়ার ও তার অনুসারীরা। কামালের নাম দলের কোনো ফোরামেই উঠছে না। সে ক্ষেত্রে পদাধিকার বলে ভাগ্য খুলে যেতে পারে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়ার। শীর্ষ নেতার সবুজ সংকেতের দিকে তাকিয়ে তিনি। সিটি নির্বাচনের বিষয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তবে বিএনপি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায়। দলের অনেক প্রার্থী থাকায় বোঝা যাচ্ছে সিটি নির্বাচন নিয়ে তারা তৎপর এবং ভিতরে ভিতরে কার্যক্রম চলছে। সিটি নির্বাচন হবে দলের প্রতীকে, এটা জাতীয় নির্বাচনের মতো হয়ে গেছে। তাই মেয়র পদে মনোনয়ন শুধু জেলা ও মহানগরের মধ্যে সীমিত থাকবে না। তবে মহানগর নেতৃবৃন্দের আশা থাকতে পারে, মহানগরীর ভোটার, তাই মহানগর থেকে কেউ প্রার্থী হলে ভালো হয়। তবে জেলা কিংবা মহানগর যেখান থেকেই দলের প্রার্থী হোক না কেন সবাই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। নিজের প্রার্থিতার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি চাঁনের আশা, দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মো. ইউনুস আহম্মেদ।

 

মহাজোটের শরিক হলেও জাতীয় পার্টি সিটিতে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন পার্টির জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল। এ ছাড়া জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ, জেলা বাসদ সংগঠক ডা. মনীষা চক্রবর্তীও সিটি নির্বাচনে তাদের দলের প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছেন। যদিও অপ্রধান দলগুলোর বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের।

বরিশাল সিটিতে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও নগরীর উন্নয়নে জনগণ সুযোগ পেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবে বলে প্রত্যাশা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেনের। প্রার্থী চাপিয়ে দিয়ে জোরজুলুম করে ভোট পিটিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।

২০১৩ সালের ১৫ জুন আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণকে প্রায় ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত আহসান হাবিব কামাল। নির্বাচনের প্রায় তিন মাস পর ৮ অক্টোবর পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ খবর