সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

তথ্য প্রকাশের দাবি সংসদে

পানামা-প্যারাডাইস খতিয়ে দেখছে দুদক : চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে প্রকাশিত অফশোর কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি উঠেছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকালের বৈঠকে স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী পয়েন্ট অব অর্ডারে এ দাবি উত্থাপন করেন।

রুস্তম আলী ফরাজী অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে যাদের নাম এসেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জাতীয় স্বার্থে প্রকাশ করা উচিত। তিনি বলেন, এর আগে পানামা পেপারসে প্রকাশিত অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িত বাংলাদেশিদের নিয়ে সংসদে কথা বলেছিলাম। তখন বলা হয়েছিল, বিষয়টির ওপর একটি তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়া হবে। ওই রিপোর্ট সম্পর্কে এখন পর্যন্ত আমরা কিছু জানতে পারিনি। দ্রুত ওই তথ্য প্রকাশ করা হোক। তিনি আরও বলেন, পানামা পেপারসে নাম ছিল ১৪ জনের। এবার প্যারাডাইস পেপারসে ২১ জনের নাম এসেছে। ওই তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী-পুত্রসহ আরও অনেকের নাম উঠে এসেছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের নামও আমরা জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, কারা সেখানে টাকা পাঠিয়েছে, কত টাকা বিনিয়োগ করেছে, কেন বিনিয়োগ করেছে, এসব বিস্তারিত জানতে চাই। ওইসব টাকা কি কালো না সাদা ছিল, কিংবা কেন বিদেশে পাচার করা হলো, তাও জানতে চাই।

প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখছে —দুদক : প্যারাডাইস পেপারসে যেসব বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি। বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্যারাডাইস পেপারসের বিষয়টি মাত্র হাতে পেলাম। আমি যাচাই-বাছাই করার জন্য পাঠিয়েছি। আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে চাই, আমরা যদি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নাও নিই; এ অবস্থায় যাতে সরকারের অন্যান্য সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

প্রসঙ্গত, বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে বিদেশে বিনিয়োগ করার তথ্য ফাঁস করে আসছে প্যারাডাইস পেপারস। ১৭ নভেম্বর নতুন করে ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করা হয়েছে। আলোচিত প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, ছেলে তাফসির আউয়াল ও তাবিথ আউয়ালসহ মোট ১০ জন বাংলাদেশির নাম রয়েছে। গত বছর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশের রেশ চলমান অবস্থাতেই ৫ নভেম্বর নতুন করে ফাঁস হয় ১ কোটি ৩৪ লাখ নথি। এসব নথি প্রথমে জার্মানির একটি দৈনিকের কাছে আসে। পরে সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) হাতে তুলে দেয় তারা। সব নথিই বারমুডাভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবির। এসব নথি পর্যায়ক্রমে তদন্ত করে দেখছেন ৬৭টি দেশের ৩৮০ জন সাংবাদিক। এখন চলছে এসব নথির বিশ্লেষণ। এতে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন সব নাম। তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের নামও। প্রতিষ্ঠানটি হলো ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড। তাদের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। পানামা পেপারস ও অফশোর লিকসের মতো প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তারা আইন ভেঙে সম্পদ গড়েছেন সরাসরি এমনটা বলা হচ্ছে না। প্রভাবশালী এই ব্যক্তিরা গোপনে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন এমন সব জায়গায়, যেখানে কর নিয়ে কড়াকড়ি নেই; সম্পদের উৎস নিয়েও কেউ মাথা ঘামাবে না। প্যারাডাইস পেপারস হচ্ছে বিশ্বের ১৮০টি দেশের রাজনীতিক, সেলিব্রেটি ও বিত্তশালী মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেন এবং মালিকানা-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের এক বিশাল ডাটাবেজ। এসব ব্যক্তি কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে (কর দিতে হয় না বা সামান্য হারে কর দেওয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

 

সর্বশেষ খবর