বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গারা ফেরত যাচ্ছে কবে

♦ সু চি বললেন রাতারাতি সম্ভব নয়, এ সপ্তাহেই চুক্তি
♦ নেপিদো ঘোষণায় রোহিঙ্গা চায় ইইউ
♦ আজ বাংলাদেশ মিয়ানমার বৈঠক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গারা ফেরত যাচ্ছে কবে

অং সান সু চি

চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বৈশ্বিক চাপের মুখে থাকা মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো লিডার অং সান সু চি। গতকাল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। রাখাইন রাজ্যে রাতারাতি শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন সু চি। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর খবরে জানানো হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে সু চি বলেছেন, ‘আমরা যেটি করার চেষ্টা করছি তা হলো, একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে যাওয়া শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু করা। আসলে অতি দ্রুত কিছুই সম্ভব নয়। যেমন রাতারাতি রাখাইনে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাও সম্ভব নয়। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আমরা একটি কার্যকর অগ্রগতি নিয়ে আসতে পারব।’ রাখাাইনে শান্তি-শৃঙ্খলা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারকে সব ধরনের সহায়তা করতে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেন সু চি। তিনি সংকট সমাধানের দীর্ঘস্থায়ী পথ গ্রহণের কথাও জানান সংবাদ সম্মেলনে। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, নেপিদো সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে আজ মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরুর কথা রয়েছে। দুই দিনের এ আলোচনার শেষ দিনে আগামীকাল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক উপলক্ষে ইতিমধ্যে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে মিয়ানমার সফর করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। বহুপক্ষীয় এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে আজ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দ্বিপক্ষীয় সফর শুরু করবেন। তিনি শুধু অং সান সু চি নন, মিয়ানমারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। ২৫ আগস্টের পর থেকে আশ্রয় নেওয়া ৬ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে থাকা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার সবাইকে ফিরিয়ে দেওয়াই এ আলোচনার উদ্দেশ্য।

নেপিদোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনের বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের এক কূটনীতিক গতকাল টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, প্রায় ৫০০ প্রতিনিধির আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মূলত এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বিভিন্নভাবে এসেছে রোহিঙ্গা ইস্যু। এর মধ্যে সোমবার বৈঠকের উদ্বোধনী সেশনের পরপরই রাখাইন ইস্যুতে একটি অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিং ও আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, এস্তোনিয়া, জার্মানি, মাল্টা, রাশিয়া, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও ইইউর হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ অংশ নেন। সাধারণভাবে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিলম্বে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ পরিহার, দেশত্যাগ বন্ধ এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন। সেই সঙ্গে সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলেও মত প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে জোর ইইউর : এশিয়া ও ইউরোপের ৫১ দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গতকাল নেপিদোতে শেষ হওয়া এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে গৃহীত ঘোষণাপত্রে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপ। ঘোষণাপত্রে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দ্রুত বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু করা এবং রাখাইন রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ‘অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট’-এর সুপারিশ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির নেওয়া পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ। বর্তমানে রাখাইনে মানবতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক বলে উল্লেখ করে ইইউ বলেছে, অবিলম্বে রাখাইনে চলমান সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করে সেখানে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা নিতে ইইউ পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছে। ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় কাউন্সিলের গৃহীত প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করে নেপিদো ঘোষণায় ইউরোপ বলেছে, নৃশংস অপরাধগুলোর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা মিয়ানমার সরকারের কর্তব্য। পাশাপাশি মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথ পরিক্রমায় ইইউর পুরোপুরি সমর্থন রয়েছে এবং এ বিষয়ে ইইউ প্রতিশ্রুতিশীল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে।

সর্বশেষ খবর