বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্যাম্পে চিকিৎসক সংকট, আবারও রোহিঙ্গা স্রোত

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

উখিয়ার বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২-এর মাঝখানে একটি টিলার ওপর বড় একটি তাঁবু। সেখানে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস। ত্রাণের লাইনের মতো এখানেও কয়েকটি লাইন। নারী-পুরুষ ও শিশুরা একসঙ্গে লাইনগুলোতে দাঁড়ানো। ভিতরে দুটি টেবিল নিয়ে বসে আছেন দুজন বিদেশি চিকিৎসক। তাদের সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের চারজন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী। টেবিলে রয়েছে পাঁচ-ছয় রকমের ওষুধ। কথা বলে জানা যায়, ডায়রিয়া, জ্বর, মাথাব্যথা—এ রকম রোগীর পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন রোহিঙ্গা গর্ভবতী মহিলাও। সময় গতকাল বেলা সাড়ে ১২টা। তখনো তিনটি লাইনে চিকিৎসাসেবার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ১২০ জনের মতো রোগী। কিন্তু চিকিৎসক সেই দুজনই। রোগীদের সঙ্গে দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলে ব্যবস্থাপত্র লিখে ওষুধ দিতে ওই দুজন চিকিৎসকের যেন দম ফেলারও সুযোগ নেই। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য চিকিৎসা কার্যক্রম। এ দৃশ্য এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিনিয়তই দেখা যায়। ভয়াবহ চিকিৎসক সংকটে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ১৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। এদের মধ্যে রয়েছে প্রায় চার লাখ নারী ও তিন লাখ ৭০ হাজার শিশু। পুরুষদের তুলনায় এই অধিকসংখ্যক নারী ও শিশুরাই এখানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও টেকনাফের ২০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার গর্ভবতী মহিলা।

আবারও রোহিঙ্গা স্রোত : আবারও শুরু হলো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের স্রোত। সোমবার উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে ৬৫০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু অনুপ্রবেশের এক সপ্তাহ পর সোমবার টেকনাফে অনুপ্রবেশ করে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা। গতকাল আবারও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের হারিয়াখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ২৬৩ জন এবং শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া পয়েন্ট দিয়ে ১২৪ জন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে। মাছধরার ট্রলারে করে এই রোহিঙ্গারা এপারে আসেন বলে জানা গেছে। বরাবরের মতো এবারও নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। প্রাথমিকভাবে তাদের টেকনাফের সাবরাং সেনা ত্রাণ ক্যাম্পে নেওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।

টেকনাফ থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর রাতে সাগরে মাছধরার ছোট ছোট ট্রলারে করে মোট ৩৮৭ জন রোহিঙ্গা এপারে আসেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন খান বলেন, রোহিঙ্গারা কখন কোন দিক দিয়ে আসে বোঝা যায় না। ভোর রাতে তারা টেকনাফের বিভিন্ন সাগর পয়েন্ট দিয়ে এপারে এসে জড়ো হয়। সকালে খবর আসে আবারও রোহিঙ্গাদের একটি দল অনুপ্রবেশ করেছে।

স্থানীয়রা জানান, শীত মৌসুমের কারণে এখন সাগর ও নদীপথ বেশ শান্ত থাকায় রোহিঙ্গারা সহজে এপারে আসতে শুরু করেছে। মাঝে দিনের বেলায় ভেলায় চড়ে এলেও এখন মাছ ধরার ট্রলারে করে রাতের আঁধারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। মূলত দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের বুছিদং, রাছিদং থানার বিভিন্ন এলাকার যে সব রোহিঙ্গা ঘরছাড়া হয়ে মংডুর ধংখালী ও নাইক্ষ্যংদিয়ায় অবস্থান করে আছে, তারাই এখন সুযোগ বুঝে এপারে পালিয়ে আসছে।

সর্বশেষ খবর