বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অবশেষে প্রেসিডেন্ট মুগাবের পদত্যাগ

অবশেষে প্রেসিডেন্ট মুগাবের পদত্যাগ

জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে অবশেষে পদত্যাগ করলেন। দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার জ্যাকব মুদেন্ডা গতকাল এক ঘোষণায় তার পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন। মুগাবেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করতে ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির উদ্যোগে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রক্রিয়ার মাঝেই তার পদত্যাগের এ ঘোষণা এলো। এ খবর প্রকাশ পাওয়া মাত্রই পার্লামেন্ট সদস্যরা উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং সাধারণ মানুষ রাজধানী হারারেসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে বর্ষীয়ান নেতা মুগাবের দীর্ঘ ৩৭ বছরের শাসনের অবসান হলো। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্পিকার বরাবর লেখা এক চিঠিতেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন মুগাবে। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তিনি স্বেচ্ছায় ও ক্ষমতার পালাবদল মসৃণ করতেই নিয়েছেন বলে চিঠিতে জানিয়েছেন। মুগাবের আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণায় তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে আনা অভিশংসন প্রক্রিয়ার শুনানি থেমে যায় বলেও খবরে বলা হয়। রবার্ট মুগাবে চলতি মাসের শুরুতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমারসন নানগাগোয়াকে বরখাস্ত করেছিলেন। মুগাবের এই পদক্ষেপকে দেশটির অনেকে স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে নিজের সম্ভাব্য উত্তরসূরি করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে আসছিলেন। জিম্বাবুয়ে সেনাবাহিনীর ভিতরে জোরালো সমর্থনধারী নানগাগোয়াকে বরখাস্তের মধ্য দিয়েই মূলত জিম্বাবুয়ের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা শুরু হয়। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রেস মুগাবেকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর মনোভাবনা ঠেকাতে দেশটির সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে। এরই অংশ হিসেবে তারা ১৫ নভেম্বর মুগাবে ও তার স্ত্রীকে হারারেতে নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় টিভিসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনারা। বিবিসি, সিএনএন।

 এ অবস্থায় পদত্যাগ করার জন্য মুগাবের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে। ৩৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা মুগাবেকে সম্মানের সঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তিনি।

ফলে মুগাবেকে পদত্যাগে বাধ্য করতে নিজের সহ-প্রতিষ্ঠিত জানু-পিএফ পার্টি তাকে রবিবার দলের নেতার পদ থেকে বরখাস্ত করে। তার স্ত্রী গ্রেসকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেইসঙ্গে বরখাস্তকৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগোয়াকে দলটির নতুন নেতা করা হয়। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের জন্য মুগাবেকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হলেও তিনি নিজ অবস্থানে অনড় ছিলেন। ফলে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফ। এ লক্ষ্যে অভিশংসন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা করতে গতকাল দিনের শুরুতে পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন বসে। পরে পার্লামেন্টের সিনেট ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে মুগাবেকে অভিশংসন করানোর লক্ষ্যে শুনানি শুরু হয়। এর মাঝেই মুগাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদত্যাগ করেছেন বলে ঘোষণা দেন পার্লামেন্টের স্পিকার।

উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়ে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন প্রেসিডেন্ট মুগাবেও। একজন গেরিলা হিসেবে তিনি যুদ্ধে লড়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে ৩৭ বছর ধরে তিনিই জানু-পিএফ পার্টি ও দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ ক্ষমতার নির্মম পরিহাসে তাকে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগই করতে হলো।

সর্বশেষ খবর