শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সংসদে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যারা এতিমের টাকা চুরি করে জনগণ তাদের ভোট দেবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

যারা এতিমের টাকা চুরি করে জনগণ তাদের ভোট দেবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংসদ অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেন

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ শান্তি চায়, উন্নতি চায়। আজ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে, মানুষ শান্তিতে আছে। তাই যারা (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা চুরি করে খায়, দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছেন, অন্তত জনগণ তাদের ভোট দেবে না, দিতে পারে না। এটাই হলো বাস্তবতা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে গত রাতে তিনি  এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষে স্পিকার সংসদ অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আদেশ পাঠ করেন। ১৮তম অধিবেশন ১০ কার্যদিবস পরিচালিত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, জনগণের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করে, যাদের দুর্নীতিতে আগাগোড়া মোড়া, যাদের এত গুণ তাদের জনগণ কেন ভোট দেবে? তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কীভাবে? বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, যাদের বিবেক আছে তারা অন্তত ওদের (বিএনপি-জামায়াত) কোনোদিন ভোট দেবে না, ভোট দিতে পারে না। তাদের ভোট দিয়ে আর অশান্তি টেনে আনবে না। তাই ওদের স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই, বড় বড় কথা বলেও লাভ নেই। তিনি বলেন, যারা এভাবে মানুষ খুন করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অর্থ পাচারের ঘটনা প্রমাণ হয়েছে, যিনি নিজে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তারা ক্ষমতা পেলে মানুষের জীবনকে আবার দুর্বিষহ করে তুলবে?

গুম-খুন প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুম-খুন নানাভাবেই হচ্ছে, আবার যারা নিখোঁজ হচ্ছে তাদের অনেকে আবার ফেরতও আসছে। এটা কী শুধু বাংলাদেশে হচ্ছে? যুক্তরাজ্যে ২ লাখ ৪৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে ১৬ কোটির ওপরে জনগণ বাস করে। আমরা এত মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কত? উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরও তাদের দেশে এত গুম হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যখনই অভিযোগ পাচ্ছি তা খতিয়ে দেখছি। দেশে একজন স্বনামধন্য আঁতেল (ফরহাদ মজহার) আছেন তিনি নাকি গুম হয়ে গেলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তিনি খুলনায় নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা তো অহরহই ঘটছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার স্বীকার করেছে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে যৌক্তিক কারণে সমস্যার সমাধান করছি। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নাম উল্লেখ না করে তার কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে আরেকটি দল আছে (বিএনপি), তারা নির্বাচনে আসেনি। এখন রাস্তায় চিৎকার করে বেড়াচ্ছে। বলছে, তারা সরকারকে নাকি টেনেই নামাবে। এটা এমন একজন লোক বললেন তার (মওদুদ) চরিত্র কী? ছাত্রাবস্থায় অন্য একটি দল করতেন। ব্যারিস্টারি করে দেশে ফেরার পর দেখলাম আমাদের বাড়ি থেকে নড়েন না। তখন বঙ্গবন্ধুর পিএ মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন, তার পিএ হিসেবেও এই লোকটা কিছুদিন কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তিনি বিএনপিতে গেলেন। এরপর গেলেন জাতীয় পার্টিতে। তিনি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। আবার জেনারেল এরশাদ চলে যাওয়ার পর আবারও গেলেন বিএনপিতে। তিনি বনানীতে চিটিং করে অবৈধভাবে একটি বাড়ি দখল করেছিলেন। আদালতের রায়ে সেই বাড়িটি হারিয়েছেন। এখন সেই ব্যক্তিটিই ঘোষণা দেন সরকারকে নাকি টেনেই নামাবেন। যিনি নিজেই মাটিতে পড়ে আছেন, তিনি কীভাবে টেনে নামাবেন?

সেনাবাহিনী জনকল্যাণ কাজে ভবিষ্যতেও অবদান রাখবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। গতকাল সাভার সেনানিবাসে মিলিটারি পুলিশ কোরের (সিএমপি) বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন ২০১৭, কোর পুনর্মিলনী এবং সিএমপি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসসের। প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক এবং জিওসি অব আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত একটি সেনাদল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব.), নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, কর্নেল কমান্ড্যান্ট অব দ্য সিএমপি অ্যান্ড স্কুল মেজর জেনারেল মিয়া মুহম্মদ জয়নুল আবেদীন, সংসদ সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সিএমপির কর্মরত কর্মকর্তা ও অবসরে থাকা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল আজিজের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। এ সময় তিনি নবনির্মিত সিএমপি সেন্টার ও স্কুল কমপ্লেক্সেরও উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেবা ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে সেনা সদস্যরা জনগণের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সমগ্র জাতির আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। দেশের জনকল্যাণমূলক কাজে ভবিষ্যতেও সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্রমধারায় আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বদরবারে একটি সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সেনাবাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আমাদের সেনাবাহিনী দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক। দেশপ্রেমিক ও পেশাদার এই বাহিনী দেশের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সর্বদা সর্বোচ্চ আস্থা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিজেদের নিবেদিত করে।

সিএমপি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের আধুনিকায়নেও তার সরকার গুরুত্ব প্রদান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক সুবিধাসংবলিত আধুনিক এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেন, নবনির্মিত এই সিএমপি কমপ্লেক্স ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে আরও সফলতা অর্জন করবে। এমনকি বহির্বিশ্বেও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান বন্ধুপ্রতিম দেশের অফিসারসহ বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং বিজিবি, আনসার ও কারা অধিদফতরের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্যকে সফলভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। মিয়ানমারের শরণার্থীদের সহযোগিতা প্রদানে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বসম্প্রদায় আমাদের মানবিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সব ধরনের সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা বহুল প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিকভাবে এই সমস্যার একটি কূটনৈতিক সমাধান এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি আনতে সাহায্য করবে।

সর্বশেষ খবর