বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। এর পর কয়েক দফায় দলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়। কিন্তু দেড় বছরের বেশি সময়েও আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় আসেনি মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৫টি উপ-কমিটি। দলের গঠনতন্ত্রে উপ-কমিটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটি কে করছেন, কারা করছেন— এ নিয়েও মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের হাজারো প্রশ্ন। তবে নানা সমালোচনার মুখে উপ-কমিটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়।
সূত্রমতে, সাম্প্রতিক সময়ে ১২টি কমিটির মধ্যে ৮টি কমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের নাম চূড়ান্ত করেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। একজন স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য এবং অন্যজন সাংগঠনিক সম্পাদক। সংশ্লিষ্টদের পূর্ণাঙ্গ উপ-কমিটি করার নির্দেশনাও দেন তারা। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়নি। এরপর এ নিয়ে বিএনপিতে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া প্রচার প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে ছাত্রলীগের এক নেতার নাম আসায় বিএনপির ভিতরে-বাইরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনলাইনে লেখালেখিতে প্রলুব্ধ হয়ে তাকে ওই কমিটির প্রধান হিসেবে রাখা হয় বলে জানা গেছে। তবে ছাত্রলীগ নেতার অতীত জীবনবৃত্তান্ত সংশ্লিষ্টরা না জেনেই একটি কমিটির প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘উপ-কমিটি গঠনের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। সময়মতো কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।’ তবে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপ-কমিটির কথা বলা আছে। তবে এ কমিটি গঠন নিয়ে আমি কিছুই জানি না। কে বা কারা করছে আমি বলতে পারব না। এ বিষয়ে আমি ম্যাডামকেও (বেগম খালেদা জিয়া) জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনিও কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।’জানা যায়, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে— অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, নারী ও শিশু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, শিল্প ও বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিরক্ষা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, যুব উন্নয়ন, শ্রম ও প্রবাসীকল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, শক্তি ও খনিজ সম্পদ, গবেষণা, মানবাধিকার, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধ, ক্ষুদ্র ঋণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং জাতীয় সংহতি ও এথনিক মাইনোরিটি বিষয়ক উপ-কমিটি প্রভৃতি।
সূত্র জানায়, বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদক উপ-কমিটি গঠন নিয়ে কাজ করছেন। খাতওয়ারী বিষয় সম্পর্কে দল সমর্থিত অভিজ্ঞদের প্রধান করে কমিটির খসড়াও তারা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে ১২টিরও বেশি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রমও চলছে। তবে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে উপ-কমিটি গঠনের কাজ চলছে। কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়েও জানেন না ওইসব নেতা। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির সাংগঠনিক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।
ডা. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। বিএনপির মুখপাত্র ‘ধানের শীষ’ বুলেটিনের সম্পাদক তিনি। তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, মানবাধিকার বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান তিনি। এ সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাননি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘তাকে কমিটি সাজাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি চান। তবে তাকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।’