শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চুক্তির দিনেও অনুপ্রবেশ

ফারুক তাহের, টেকনাফ (কক্সবাজার) থেকে

নাফ নদ সাঁতরিয়ে, বাঁশ-গাছের ভেলায় চড়ে, ছোট ছোট নৌকা কিংবা ট্রলারে করে রোহিঙ্গারা যে যেদিকে পারছে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের হাড়িয়াখালী ও শাহপরীর দ্বীপে ছুটে আসছে। এটাই এখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের নিরাপদ রুট। এ রুটে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। গতকাল মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের দিনেও রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করেছে।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ভেলায় চড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ রোহিঙ্গা টেকনাফের সাবরাং, হাড়িয়াখালী, দক্ষিণপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট, জালিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। মাঝে কিছুদিন ভেলায় চড়ে রোহিঙ্গা আসা থামলেও গত বুধবার আবারও শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে মাছধরার ট্রলারে করে মিয়ানমারের ধংখালী ও নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে প্রায় প্রতিদিনই গড়ে ৩০০ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। বুধবার নাফ নদে রোহিঙ্গাদের একটি ভেলা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি টহল দল ৩৬ জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসে। অন্য একটি ভেলায় করে পার হয়েছে ৭ সদস্যের একটি দল। এ ছাড়া গতকাল হাড়িয়াখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে নৌকায় করে অনুপ্রবেশ করেছে আরও ৬০ জন রোহিঙ্গা। এই ১০৩ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে সাবরাংয়ের সেনা ত্রাণ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে বলে পুলিশ ও বিজিবি নিশ্চিত করেছে। সরেজমিনে টেকনাফের সাবরাং গিয়ে জানা গেছে, শাহপরীর দ্বীপ ও হাড়িয়াখালী দিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাবরাং সেনা ত্রাণ ক্যাম্প থেকে সরাসরি ত্রাণ কার্ড দিয়ে বিজিবির সহায়তায় টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই ত্রাণ কার্ড দিয়েই পরবর্তীতে উখিয়া ও টেকনাফের ত্রাণ ক্যাম্প থেকে তারা সহজেই ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করে থাকে। আবার শাহপীরর দ্বীপ দক্ষিণ ঘাট থেকে হাড়িয়াখালী ঘাটে আসার সময় নগদ টাকা ও ত্রাণসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া ভেলায় চড়ে আসতে রোহিঙ্গাদের কোনো টাকা-পয়সা লাগে না বিধায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবাধে চলে আসছে অবশিষ্ট রোহিঙ্গারাও। বাঁশ-গাছ ও প্লাস্টিকের জারিকেন দিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে বানানো ভেলায় করে প্রতিদিন এপারে চলে আসছে তারা। এ ছাড়া শীত মৌসুমের প্রভাবে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের বর্তমান পরিবেশ অনেক বেশি শান্ত থকায় ভেলায় চড়ে নিরাপদেই এপারে চলে আসছে রোহিঙ্গারা। এটাই এখন সবচেয়ে বেশি নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের কাছে। এভাবেই এখন গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা যুক্ত হচ্ছে মূল রোহিঙ্গা স্রোতের সঙ্গে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন স্থলসীমান্ত দিয়ে না এসে নৌপথই ব্যবহার করছে বেশি। এতে তাদের কম বিড়ম্বনা পোহাতে হয় এবং ত্রাণ সহায়তা, যাতায়াত সুবিধা পাওয়াটা অনেক বেশি নিশ্চিত হয়। ফলে স্থলসীমান্ত দিয়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি না দিয়ে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে এই নৌরুটই ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা।’

গতকাল হাড়িয়াখালীতে মিয়ানমারের রাসিদং থেকে আসা রোহিঙ্গা যুবক আমান উল্লাহর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগে নিজের পরিবার নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পাড়া ছাড়েন তিনি। আট দিন হেঁটে মংডুর ধংখালীর চরে এসে পৌঁছেন তারা। কিন্তু নৌকা বা ট্রলারে করে আসার মতো টাকাপয়সা না থাকায় এপারে আসতে পারেননি এত দিন। খেয়ে না খেয়ে ধংখালীতে দিন কাটানোর পর এবার ভেলায় চড়ে এপারে এসেছেন তারা।

এদিকে টেকনাফের সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ত্রাণ কার্ড লাভের আশায় কৌশলে সাবরাং হাড়িয়াখালী গিয়ে নিজেদের নতুন রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। নগদ টাকা, ত্রাণ কার্ড ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণসামগ্রী লাভের আশায় টেকনাফের বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে গিয়ে এই প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার টেকনাফের হাড়িয়াখালী থেকে প্রতারণার মাধ্যমে পুনরায় ত্রাণ কার্ড নিতে গিয়ে বিজিবির হাতে আটক হয়েছে ১০ রোহিঙ্গা। তাই এখন কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান বিজিবির এক কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর