শিরোনাম
শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রমাণ করেছি আমরা পারি

পরমাণু বিশ্বে প্রবেশ বাংলাদেশের, নির্মাণ উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

জিন্নাতুন নূর, রূপপুর (পাবনা) থেকে

প্রমাণ করেছি আমরা পারি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা আমার দায়িত্ব। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আজ বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে আমরা যে পারি তা প্রমাণিত হলো।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে পারমাণবিক নিরাপত্তার ওপর আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করছি।’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই স্বপ্নের শুরু হয়েছিল তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে। পাকিস্তানিরা আমাদের দেশের টাকা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত, আর আমাদের উন্নয়ন করবে বলে কেবল “মুলা” ঝুলিয়ে রাখত। তেমনই ছিল এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জমি অধিগ্রহণসহ বেশকিছু কাজ তখন সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দিয়ে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় দেশের বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী তার প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদও এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর সে কাজ আর এগোয়নি। তিনি বলেন, ‘এরপর দীর্ঘদিন কোনো সরকারই এ নিয়ে আর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম হাতে নিই।’ এ সময় ব্যক্তিজীবনে তার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করে গেছেন। লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছেন। দীর্ঘ ২৩ বছর এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কত না নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের অধিকাংশ সময়ই কারাগারে থাকার স্মৃতিচারণা করেন। প্রধানমন্ত্রী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে অহেতুক সমালোচনাকারীদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এটা নিয়ে যারাই প্রশ্নগুলো তোলেন, আমার মনে হয় তাদের ভিতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে।’ জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীর’ উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার বক্তব্য অনুযায়ী একশ্রেণির ‘পরশ্রীকাতর’ লোক দেশে রয়েছেন। তারা সবকিছুতেই একটা নেগেটিভ কিছু খুঁজে বেড়ান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের এই শ্রেণির লোকেরা লেখাপড়ায় খুব উচ্চমানের এবং তারা সরকারি-বেসরকারি খাতে টেলিভিশনকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার সুযোগে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে “টক-শো” করে বেড়ান। প্রতিনিয়তই কতগুলো প্রশ্ন তারা উত্থাপন করেন। তারা গভীরভাবে দেখেন না যে প্রকৃতপক্ষে আমরা (তার সরকার) কী কী করে যাচ্ছি। তাদের এসব প্রশ্ন যে অবান্তর তাও কিন্তু তাদের ভেবে দেখা উচিত।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক, রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সিই লেখাচভ ও আইএইএর পরিচালক দোহি হ্যান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন এবং প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জোগান দেবে।

রোসাটমের মাধ্যমে রাশিয়ার আর্থিক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

সর্বশেষ খবর