শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে হরতাল

বিক্ষোভ দমনে বিকট শব্দ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিক্ষোভ দমনে বিকট শব্দ!

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম-মোর্চার ডাকা এবং বিএনপি সমর্থিত অর্ধ দিবস হরতাল চলাকালে রাজধানীতে পিকেটিং —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম-মোর্চার ডাকা এবং বিএনপি সমর্থিত অর্ধ দিবস হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল সফল করতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করা হয়েছে।

বামপন্থি নেতারা জানান, অনেক জায়গায় হরতাল সমর্থকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধশত নেতা-কর্মীকে। এর প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে। রাজধানীতে কর্মসূচি সফল করতে গতকাল সকাল থেকে পল্টন, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বামপন্থি নেতা-কর্মীদের মিছিল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ করেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোট’র নেতা-কর্মীরা। হরতালের সমর্থনে সকালে পল্টনের সিপিবি অফিসের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা হয়ে পল্টনের সিপিবি অফিসে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ ছাড়া হরতাল চলাকালে সকাল ৮টার দিকে শাহবাগ থেকে একটি মিছিল বের করেন বাম নেতারা। মিছিলটি মত্স্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পুরাতন পল্টন, বায়তুল মোকাররম গেট থেকে ঘুরে কাকরাইল হয়ে আবার প্রেস ক্লাবের সামনে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। উল্লেখ্য, অর্ধ দিবস হরতাল থাকলেও রাজধানীর সব জায়গায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পুলিশ বলেছে, হরতালের প্রভাব রাস্তায় পড়েনি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি।

শাহবাগে বাধা : সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হরতালের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানার সামনে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বাধা অতিক্রম করে জোট নেতা-কর্মীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর আলট্রাসনিক সাউন্ড নিক্ষেপ করে। এ সময় বিকট শব্দে অবস্থানকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে আবার তারা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বেলা ১১টার দিকে কাঁটাবন থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সমাবেশ শুরু করেন। এতে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও জোটের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক স্নেহার্দি চক্রবর্তী রিন্টু প্রমুখ। সমাবেশ শেষে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবে যান জোটের নেতা-কর্মীরা। বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন জানান, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে সরকার জনগণকে আঘাত করছে। জনগণও এর প্রতিবাদে পাল্টা আঘাত করবে। সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। দমন-নিপীড়ন করে সরকার জনগণকে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মেনে নেওয়া হবে না। এর প্রতিবাদে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাব। অর্ধ দিবস হরতালে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর প্রতিবাদে আগামীকাল (আজ) প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল পালন করা হবে।

বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— খুলনা : খুলনা মহানগরীতে আহূত হরতালের সময় সকাল ৭টায় ডাকবাংলা মোড়ে পুলিশ হরতাল সমর্থনকারীদের মিছিলে লাঠিচার্জ করে। এতে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য এম এ রশিদসহ দুজনকে আটক করে। বরিশাল : বরিশালে হরতাল আহ্বানকারীরা থেমে থেমে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন। তারা যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করেন। কিন্তু হরতালের মধ্যেও নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এবং রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লা রুটের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। নদীবন্দর থেকেও সব ধরনের নৌ চলাচল করেছে যথারীতি। এ ছাড়া দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত এবং ব্যাংক-বীমাসহ সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিকভাবে চলেছে। সিলেট : সিলেটে সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চার ডাকা অর্ধ দিবস হরতালে সাড়া মেলেনি। সকাল থেকে নগরীতে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচলের পরিমাণও বাড়ে। হরতালে ট্রেন ও দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সকাল ৮টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্টে হরতাল সমর্থকদের উদ্যোগে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে অন্য কোথাও মিছিল বা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে হরতাল সমর্থনকারীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেছেন। বেলা ১১টায় শহরের চৌমোহনা চত্বরে রাস্তায় বসে পড়ে তারা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পুলিশ বাধা দিলে হরতালকারীরা সরে যান। এ ছাড়া শহরে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন হরতালকারীরা। কিশোরগঞ্জ : হরতালের সময় কিশোরগঞ্জে পিকেটারদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এতে জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হকসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। আহতদের কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকালে হরতালের সমর্থনে সিপিবি ও বাসদের নেতা-কর্মীরা শহরে মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের পুরানথানা এলাকায় গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ব্যানার কেড়ে নেয়। পরে মিছিলকারীরা জেলা সিপিবি কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। হরতালে শহরের দোকানপাট বন্ধ ছিল। গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় হরতালে জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। হরতালের ডাক দেওয়া দলগুলোর মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ করলে ১২ জন আহত হন। পুলিশ ১০ নেতা-কর্মীকেও আটক করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল শহরের ডিবি রোডের এক নম্বর ট্রাফিক মোড়ের কাছে এলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে।

সর্বশেষ খবর