শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
টিআইবির গবেষণা

নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টে ন্যস্ত করার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টে ন্যস্ত করার সুপারিশ

নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ  (টিআইবি)।  টিআইবির ‘বাংলাদেশের অধস্তন আদালত ব্যবস্থা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণায় এ সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এ সময় অধস্তন আদালতসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করতে ১৮ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি  বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অধস্তন আদালত বিচার ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির  ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী বিদ্যমান দ্বৈত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কিছু ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরিসহ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এ ব্যবস্থা সঠিকভাবে কর্মসম্পাদনে বড় অন্তরায় হিসেবে অধস্তন আদালতগুলোর সার্বিক কর্মপরিবেশকে প্রভাবিত করছে। গবেষণায় বলা হয়, দেশের অধস্তন আদালতের ওপর একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান বিদ্যমান থাকায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়া অধস্তন আদালত ব্যবস্থার কার্যকরতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের পরেও অবকাঠামো, লজিস্টিকস, বাজেট, জনবল, প্রশিক্ষণ ও কার্যকর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার ঘাটতি; মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থের লেনদেনসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মের ফলে অধস্তন আদালত ব্যবস্থায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ আছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্বৈত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে। টিআইবির এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করতে দেশের ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ১৮টি জেলার ৪৩৭ জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মুখ্য তথ্যদাতা ও নিবিড় সাক্ষাৎকারদাতারা হলেন নিম্ন আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আইনজীবীদের সহকারী, জেলা আইনগত সহায়তা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, গণমাধ্যম কর্মী ও অন্যান্য। এ ছাড়া আইনজীবী ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে দলগত আলোচনা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি অধস্তন আদালতসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ১৮ দফা সুপারিশ পেশ করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযোজ্য  ক্ষেত্রে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও পুরনো আইনের সংস্কার, যথাযথভাবে চাহিদা নিরূপণ সাপেক্ষে অধস্তন আদালতগুলোর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা, অধস্তন আদালতসমূহের জন্য পর্যাপ্ত জনবল, অবকাঠামো, লজিস্টিকস ও আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত, বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুততর, অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের নিয়োগ স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নিয়োগ স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা প্রভৃতি।

সর্বশেষ খবর