সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু আসায় পূর্ণতা পায় স্বাধীনতা

ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম (অব.)

বঙ্গবন্ধু আসায় পূর্ণতা পায় স্বাধীনতা

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত  হয়েছিল সারা দেশের মানুষ, একই সঙ্গে স্বজন হারানোর ব্যথা ছিল বাংলার ঘরে ঘরে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও বিজয়ের পুরোপুরি স্বাদ বা তৃপ্তিটা তখনো পাইনি। কারণ যে মহান নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে নেমে আমরা দেশ স্বাধীন করি সেই নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তিনি ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পরই বাঙালি জাতি প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পায়। আমাদের স্বাধীনতাটা একদিনে আসেনি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা এসেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধন শুরু করে। সে রাতেই অর্থাৎ গ্রেফতার হওয়ার আগেই ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র বাঙালি রূপে আবির্ভূত হয়ে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। এ যুদ্ধ ছিল আমাদের মুক্তির। ‘গায়ে পড়ে আক্রমণ নয়’ নীতির অনুসারী বঙ্গবন্ধু মনোস্থির করেন, পাকিস্তান যদি আক্রমণ করে, তাহলে তিনি পাল্টা আক্রমণ করবেন। কেউ যেন তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলতে না পারে সে বিষয়ে তিনি খুব সচেতন ছিলেন। তিনি জানতেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি জাতির সবাই, গুটিকয়েক লোক বাদে (রাজাকার, আলবদর) পাকিস্তানের শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে। জাতির পিতা তার ঐতিহাসিক ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের সব দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনটা খুব সহজ ছিল না। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা না পেলে এত তাড়াতাড়ি আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না। ১৯৭১-এর আগে, দীর্ঘকাল ধরেই বাঙালি স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সঠিক নেতৃত্ব না পাওয়ায় তা হয়ে ওঠেনি। সেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতেন, যে কারণেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন ও গৌরবের বিষয়। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে উঠছে। ২৫ মার্চের পর দেশের মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে হানাদারমুক্ত করে। বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে প্রতিটি বাঙালি বুঝতে পেরেছিল যে স্বাধীনতা খুব কাছেই। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর ঢাকা থেকে বহু বাঙালি ইপিআর-আনসার-পুলিশ নরসিংদী জেলায় যান। ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে ওঠার পর ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমাদের সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম শফিউল্লাহ (বীরউত্তম, পরে সেনাপ্রধান ও মেজর জেনারেল) আগস্ট মাসে মুক্তিবাহিনীর একটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠনের দায়িত্ব পান। তখন এ এন এম নূরুজ্জামান ৩ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পান। তিন নম্বর সেক্টরের আওতাধীন এলাকা ছিল হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর জেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ। ৩ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বহু অভিযান চালান। তার সার্বিক নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সরাসরি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে আখাউড়ার যুদ্ধ অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটের মধ্যে রেল যোগাযোগের জন্য আখাউড়া রেলজংশন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। আখাউড়া থেকে আগরতলা সড়কপথে সংযুক্ত। অনুলিখন : রফিকুল ইসলাম রনি।

সর্বশেষ খবর