বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আকায়েদের স্ত্রী শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে টাইমস স্কয়ারের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে সোমবার বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেফতার বাংলাদেশের নাগরিক আকায়েদ উল্লাহ ওরফে সপুর স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সদস্যরা। টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে ঢাকার জিগাতলার মনেশ্বর রোডের বাসা থেকে তাদের নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, আকায়েদ উল্লাহ গত বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর হাজারীবাগের জিগাতলায় বিয়ে করেন। ওই সময় তার স্ত্রী রাজধানীর সিটি কলেজে পড়তেন। তাদের ছয় মাস বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। আকায়েদ উল্লাহর বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নে। সর্বশেষ ৮ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে এসেছিলেন। ২২ অক্টোবর পুনরায় নিউইয়র্কে ফিরে যান। আকায়েদ উল্লাহর স্ত্রী ছয় মাসের ছেলেকে নিয়ে ঢাকার জিগাতলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আকায়েদের স্ত্রীসহ তার শ্বশুরবাড়ির পক্ষের স্বজনদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে সন্দেহ করার মতো মনে হয়নি।’ জিগাতলার যে বাড়িতে তারা ভাড়া থাকেন সেই বাড়ির মালিক রহিমা ইসলাম বলেন, ‘ওই পরিবারটি ১৯৯৭ সাল থেকে ভাড়া থাকে। ওই পরিবার খুব বেশি সচ্ছল নয়। গত বছর তাদের সিটি কলেজে পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে হয় আকায়েদের সঙ্গে। বিয়ের পর এ বছর জুনে একটি ছেলেসন্তান হয়। গত সেপ্টেম্বরে আকায়েদ এখানে এসে এক মাস ছিলেন।’ গত সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ম্যানহাটনে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাসস্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে বোমা হামলা হয়।  জন্ম সন্দ্বীপে, বেড়ে ওঠা ঢাকায় : নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের বাস টার্মিনালে বোমা হামলার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া আকায়েদ উল্লাহর গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে। তবে তার বেড়ে ওঠা ঢাকার হাজারীবাগে। চট্টগ্রাম জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আকায়েদ বড় হয়েছে ঢাকায়। তাই তার বিষয়ে খুব একটা তথ্য নেই আমাদের কাছে। তার কোনো অপরাধ রেকর্ডও নেই।

তারপরও আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’ সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নাদিম বলেন, আকায়েদের পরিবার প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকায় বসবাস শুরু করে। সেখানেই তারা বড় হয়েছে। পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় রয়েছে। আমেরিকায় যাওয়ার আগেও গ্রামের মানুষের সঙ্গে তাদের তেমন একটা যোগাযোগ ছিল না। তাদের চাচারা গ্রামে বসবাস করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগেই তার পরিবার ঢাকার হাজারীবাগে বসবাস শুরু করে। মাঝে কিছুদিন গাজীপুরে ছিল আকায়েদ ও তার পরিবার।

২০১১ সালে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায় আকায়েদ। পরে আকায়েদ স্থায়ী মার্কিন অধিবাসী হিসেবে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাস করতে শুরু করে। সেখানে বর্তমানে তার স্ত্রী, মা, বোন এবং দুই ভাইকে নিয়ে বসবাস করছে। দেড় বছর আগে চাঁদপুরের এক মেয়েকে বিয়ে করে আকায়েদ। বিয়ের পরপরই সন্দ্বীপের গ্রামের বাড়িতে এসে প্রয়াত বাবার জন্য মেজবান দেয়। এরপর আর কখনো গ্রামের বাড়িতে আসেনি আকায়েদ। সর্বশেষ এ বছরের ৮ সেপ্টেম্বর দেশে আসে সে।

এ সময় ঢাকায় কিছু দিন অবস্থান করে ফের যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। আকায়েদ উল্লাহর চাচাতো ভাই মো. এমদাদ বলেন, ‘আমার চাচা সানাউল্লাহ ঢাকার হাজারীবাগে ট্যানারি ব্লকে মুদির দোকান করতেন। সেই সুবাদে ঢাকায় বড় হয়েছে আকায়েদ। ২০১১ সালের দিকে তারা সপরিবারে আমেরিকায় চলে যায়। এ পর্যন্ত দুবার দেশে আসে আকায়েদরা। এর মধ্যে একবার সন্দ্বীপে আসে তারা। তাদের সঙ্গে আমাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। আমার চাচা আমেরিকায় মারা গেলেও তার লাশ দেশে আনা হয়নি। সেখানে তারা কে কী করত আমরা জানি না। এখন শুনছি, আমার কাজিন বোমা হামলা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নেইলের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে,  গ্রেফতার হওয়া আকায়েদের শরীরে বিস্ফোরক ডিভাইস সংযুক্ত ছিল। বোমাটি তার শরীরে বিস্ফোরণ হওয়ায় সে নিজেসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর