বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঐক্য প্রয়োজন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির

বাদল নূর

ঐক্য প্রয়োজন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির

খালেকুজ্জামান

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেছেন, বর্তমান সময়ে প্রয়োজন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক মত পথের সমঝোতা। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউই তাদের শাসনামলে গণতান্ত্রিক আচরণ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে সুশাসনের নজির স্থাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, জনগণের ক্ষমতায়ন অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সমঝোতা আর ব্যক্তি-গোষ্ঠী বা দলের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সমঝোতা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। একটিতে সমষ্টির বৃহত্তর স্বার্থ প্রতিফলিত হয় আর অন্যটিতে সংকীর্ণ দলীয় বা গোষ্ঠী স্বার্থের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উপস্থিত হয়। খালেকুজ্জামান বলেন, বর্তমান সময়ে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা, হলেও তা সবার অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন এবং শঙ্কার বিষয় হয়ে রয়েছে যখন সাধারণ জনমত ধরতে গেলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বাস্তবে তলানিতে রয়েছে। রাজধানীর তোপখানা রোডে নিজ দলীয় কার্যালয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। খালেকুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি পরিবারতন্ত্রের বাইরে যেতে পারেনি। বিভিন্ন সময় পরস্পর দোষারোপের বাচাল বিতর্কে পরিণত হয়েছে। দলীয় শাসনের কবল থেকে বেরিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেনি। তাদের শাসনামলে রাজনীতি বাণিজ্য এবং দুর্বৃত্তায়নের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পায়নি। মূলত একই পুঁজিবাদী নীতি নিয়ে দেশ পরিচালনা করলেও সংঘাত এড়িয়ে পারস্পরিক দূরত্ব কমাতে পারেনি। ফলে ক্ষমতা দরজায় কড়া নাড়ার সময় সমঝোতা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। খালেকুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির একজনের পক্ষে ক্ষমতা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ আর অন্যজনের জন্য ক্ষমতার বাইরে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। জীবন বাঁচানো এবং দল বাঁচানোর এই মহাসংকটকালে শান্তি ও সমঝোতার পথ ক্রমেই সরু হতে হতে কানাগলিতে পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমানে রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা চলছে। যারা এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন এবং বাড়িয়ে চলেছেন তাদের দিয়ে এর সমাধান সম্ভব নয়। খানিক সময়ের জন্য চাপা দেওয়া যেতে পারে। যেমনটি অতীতে করা হয়েছে এবং তার পরেই তা বহুগুণে বিস্ফোরিত হয়েছে। এখন প্রয়োজন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক মত পথের সমঝোতা। বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান আরও বলেন,  মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও আদর্শের পথে দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে না। জনগণের ক্ষমতায়নের বদলে জনগণকে ক্ষমতাহীন করা হচ্ছে। কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতাকে অপ্রতিরোধ্য করা হচ্ছে। কালো টাকার অর্থনীতি দিয়ে সাদা অর্থনীতিকে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। আইনের শিকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বেঁধে রেখে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীকে আইনের ঊর্ধ্বে বিচরণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মূলকথা জোর যার মুল্লুক তার এ অবস্থায় রাজত্ব চলছে। তিনি বলেন, দেশের শান্তি রক্ষায় দলের সমঝোতা নয়, নীতির সমঝোতা প্রয়োজন। গণবিরোধী শক্তির চেয়ে গণঐক্যের শক্তিকে অধিকতর শক্তিশালী করা প্রয়োজন। প্রদর্শনবাদ ছেড়ে আদর্শবাদের দিকে মুখ ফেরাতে হবে। অন্ধ আবেগ, নীতিহীন আনুগত্য ছেড়ে যুক্তি, বিবেক ও বিজ্ঞান মনষ্কতার ওপর ভর করতে হবে। মানবতা, মনুষ্যত্ব ও মানুষের উন্নতির চেয়ে নিজের উন্নতিকে বড় করে তোলার পথ পরিহার করতে হবে। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা অর্জনে সক্ষম কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলুষিত বিষাক্ত রাজনৈতিক আবহাওয়া ও জমিতে নির্বাচন কমিশন এককভাবে গণতন্ত্রের পুষ্পবাগান সাজাতে পারে না। এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ‘মালিক দড়ি ছাড়বে যতখানি গরু চরে বেড়াবে ততখানি। সপ্তসুরের ব্যঞ্জনা ছাড়া সংগীত হয় না। শাসন-প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থাসহ সব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ খোঁড়া করে রেখে নির্বাচন কমিশন ‘কর্তার ইচ্ছায় কীর্তনের বাইরে খুব বেশি দূর যেতে পারে না। সে কারণে জনগণের আস্থাও আলো আঁধারিতে অস্পষ্ট থাকছে।

সর্বশেষ খবর