বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এফবিআই চেয়েছে আকায়েদের তথ্য

সেপ্টেম্বরে গিয়েছিলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বোমা হামলার অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহর (২৭) ব্যাপারে তথ্য চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। মঙ্গলবার বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে তারা এ ধরনের তথ্য জানতে চায়। তবে বাংলাদেশে আকায়েদের উগ্রবাদী কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার পর মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেখতে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন আকায়েদ। এ ছাড়া গতকাল আকায়েদের এক সহপাঠী বন্ধু ও তার এক শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কাউন্টার টেররিজমের সদস্যরা। তাদের কাছ থেকেও কোনো ধরনের সন্দেহজনক তথ্য পাননি তারা। সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আকায়েদ আমেরিকায় গিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উগ্রবাদে জড়িয়ে থাকতে পারেন। তিনি বাংলাদেশে থাকার সময় তার সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। তাই ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নিউইয়র্কেই জঙ্গিবাদে ‘হোম গ্রোন’ হয়েছেন। হয়তো আমেরিকায় গিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। দেশে তিনি কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিউইয়র্কের বাস টার্মিনালে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযোগের মুখে এরই মধ্যে আকায়েদের স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক ও তার এক বন্ধুকে মিন্টো রোডের সিটিটিসি কার্যালয়ে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গতকাল সকালে প্রায় দুই ঘণ্টা আকায়েদের শ্যালক হাফিজ মাহমুদ জয় ও বন্ধু ওয়াহেদুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। ওয়াহেদ ও আকায়েদ কাকলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বাংলাদেশ রাইফেলস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মনিরুল বলেন, ‘জিরো টলারেন্সের পর বাংলাদেশের একজন নাগরিকের এমন কর্মকাণ্ড দুশ্চিন্তার বিষয়। তাই এ ঘটনা অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমাদের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে। যদি তারা আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করে সহায়তা চায় তবে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’ কাজী নাফিস নামে একজন বাংলাদেশি আমেরিকায় উগ্রবাদের সংশ্লিষ্টতায় আটক হয়েছিলেন সেই তথ্য টেনে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কাজী নাফিসের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য ছিল, সে যেসব মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তারা হিজবুত তাহ্রীর ও আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে আকায়েদের সম্পর্কে বাংলাদেশে এমন কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।’ আকায়েদের পারিবারিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসার পর ১৫ সেপ্টেম্বর সড়কপথে কক্সবাজার গিয়েছিলেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ১৬ সেপ্টেম্বরই তিনি পুনরায় ঢাকায় ফেরেন। ২২ অক্টোবর আকায়েদ যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে আসতেন তিনি। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেন। সে সময় মার্চ পর্যন্ত দেশে ছিলেন তিনি। ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে পুনরায় বাংলাদেশে এসে জানুয়ারি পর্যন্ত ছিলেন।

গতকাল আকায়েদ উল্লাহর শ্বশুরবাড়ি রাজধানীর জিগাতলার মনেশ্বর রোডের বাসায় গেলে কথা হয় তার শাশুড়ি মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় বাইরে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছিলেন হাজারীবাগ থানা পুলিশের সদস্যরা।

মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘আমরা মনে করি আকায়েদ এ ঘটনায় জড়িত নয়। সে এ ধরনের কোনো কাজ করতে পারে না। আপনারা আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেন। সবাই বলবে সে অত্যন্ত ভালো ছেলে। সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করত। নামাজ পড়ত। কোনো ধরনের হিংস্রতা বা নিষ্ঠুরতা তার মধ্যে ছিল না। আমরা মনে করি এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। নিশ্চয়ই সঠিকভাবে তদন্ত করলে তা প্রকাশ পাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

দুপুরে যখন মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, ঘরের ভেতর তখন আকায়েদের স্ত্রী-সন্তানসহ আরও কয়েকজন নারী ছিলেন। আকায়েদের স্ত্রী জুঁইর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে জুঁই। সোমবার পুলিশ আমাদের নিয়ে গিয়েছিল। তারা নানা প্রশ্ন করেছে। আমরা যা জানি তা-ই তাদের বলেছি। আমরা কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। জুঁই এখন অসুস্থ।’ একপর্যায়ে ভেতরের একটি কক্ষ থেকে কথা বলেন জুঁই। ধীর কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘তিনি (আকায়েদ) আমাদের আমেরিকায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কয়েক মাস পরে আবার দেশে আসার কথা ছিল। তিনি সন্তানকে অনেক ভালোবাসেন। সব সময় তার খোঁজ খবর নিতেন। তারপর তিনি কেন সন্ত্রাসী হামলা করবেন, আমরা বুঝতে পারছি না।’ এটা তিনি বিশ্বাস করেন না বলে জানান।

জিগাতলার মনেশ্বর রোডের শাহী মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. জাকারিয়া জানান, আকায়েদের সঙ্গে কখনো কথা হয়নি তার। তবে অনেকের মতো মসজিদে তাকেও দেখেছেন তিনি।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আকায়েদের স্ত্রী, বন্ধু ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু দেশে তার কোনো ধরনের জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর পরও এ বিষয়ে আমরা তত্পর রয়েছি।’

সর্বশেষ খবর