মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নাগরিকত্ব দিয়েই রোহিঙ্গা ফেরাতে হবে

প্রতিদিন ডেস্ক

রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। চীন-রাশিয়াসহ ১০টি দেশের বিরোধিতা উপেক্ষা করে এ প্রস্তাব পাস হয়। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার প্রশ্নে উত্থাপিত প্রস্তাবে একই সঙ্গে মুসলমান রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শেষ করার জন্যও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এএফপির বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান পত্রিকা এ তথ্য জানিয়েছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) আনা ওই প্রস্তাবে ১২২টি দেশ পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু চীন রাশিয়ার সঙ্গে কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, বেলারুশ, সিরিয়া, জিম্বাবুয়ে ও মিয়ানমার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। আর ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ ২৪টি দেশ। পৃথিবীর সব থেকে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীকে নিধনের জন্য সামরিক অভিযানের নামে অমানবিক নির্যাতন চলছে। এ নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। পাশাপাশি মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিয়োগেরও আহ্বান জানানো হয় অনুমোদিত প্রস্তাবে।

মাস চারেক আগে অর্থাৎ গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে ব্যাপক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের দেশটির জন্য হুমকি আখ্যা দিয়ে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায়ের অভিযোগ, আসলে নিরাপত্তার আওয়াজ তুলে মিয়ানমার সরকার সেখানে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের খায়েশ নিয়ে অভিযান শুরু করেছে। সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে মেয়েদের। আর হত্যা করা হয় হাজার হাজার পুরুষকে। উপায়ান্তর না দেখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মানবিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার এই চার মাসে কমপক্ষে সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমার সরকারের এ ভূমিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এর মধ্যে এ সংগঠনগুলো মিয়ানমারে খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ অভিযোগকে থোড়াই কেয়ার করে সেখানে এখনো ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযোগ আছে, চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের এ ধ্বংযজ্ঞকে সমর্থন দিচ্ছে। এই দুটো দেশের সমর্থন থাকায় কাউকে পরোয়া করছে না মিয়ানমার। অবশ্য সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মিয়ানমার সরকার সে দেশে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সম্মতি দিলেও তা কার্যকর করা নিয়ে সন্দেহ পুষিয়ে রেখেছে। এদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ত্রাণকর্মীদের মিয়ানমারে কাজ করার সুযোগ দেওয়া, সব শরণার্থীর ফেরা নিশ্চিত করা এবং রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার প্রদানের মতো বিষয়গুলোকে ওআইসির প্রস্তাবটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ছাড়া মিয়ানমারে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের নতুন নিয়োগের জন্য তহবিল প্রদানের ব্যাপারে বাজেট কমিটির কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই সাধারণ পরিষদ প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। এদিকে মিয়ানমার সরকারের আপত্তিতে দেশটিতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়ানঘি লির আসন্ন সফর অনিশ্চিত হয়ে আছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিপীড়নসহ মিয়ানমারজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্ত করতে জানুয়ারিতে দেশটি সফর করার কথা ছিল তার। কিন্তু ২০ ডিসেম্বর মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, জাতিসংঘের এ তদন্তকারীকে আর কোনো সহযোগিতা দেওয়া হবে না। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে লি জানিয়েছেন, মিয়ানমার সরকার তাকে সফরের অনুমতি দেয়নি। তার সন্দেহ, রাখাইনে এমন ভয়াবহ কিছু ঘটছে যা আড়াল করতে তাকে সফরে বাধা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর